আমরা সবাই যে কোনো উপায়ে নিজকে সুখী রাখতে চাই। কিন্তু আমরা এর উপায় ভালো ভাবে
জানি না। আমরা নিজের ভালো থাকার সাথে আরেক জনকে খুব গভীরভাবে জড়িয়ে ফেলি। যেটা
কিনা আদৌ ঠিক নয়। আমি কীভাবে ভালো থাকব; তা কোন ভাবেই অন্য কারো উপর নির্ভর করতে পারে
না। কিন্তু এই নির্ভরশীলতা আমরাই তৈরি করে নেই; যার দরুন পরবর্তী সময়ে অন্যের কথা, আচরন,কাজে আমরা সুখী হই অথবা ব্যথিত হই। তাই ভালো
থাকার সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে অন্যের উপর থেকে নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা এবং নিজকে নিয়ে
ভালো থাকার চর্চা করা। নিজকে ভালো রাখার প্রতি একচুল ছাড় না দিয়ে বরাবরই উচিত-
ভালো থাকাটাকে আত্নকেন্দ্রিক করে নেওয়া। কেননা নিজেকে যদি নিজের মতো করে ভালো রাখা
যায়, তাহলে ভালো না লাগার মতো অসুখ ভালো থাকার
জানালায় এসে উঁকি দিতে পারে না। আপনি উদ্ভুত একটি ব্যাপার লক্ষ্য করবেন, কোনো কারন ছাড়াই কেউ যদি আপনাকে দেখে হাসি দেয়, আপনিও কিন্তু হাসি না দিয়ে থাকতে পারেন না।
তার মানে কি? তার হাসির সাড়া হিসেবে আপনিও একরাশ হাসি
ছড়িয়ে দিয়েছেন। আপনি যদি একান্তই নিজে ভালো থাকতে পারেন, তাহলে আপনার অজান্তেই আপনার এ ভালো লাগা অপরের মাঝে ছড়িয়ে পড়বে। সবার ভালো
থাকার ইচ্ছা জাগবে। ভালো লাগায় পূর্ন হয়ে উঠতে থাকবে প্রত্যেকের প্রত্যহ। কারন
সবাই ভালো থাকতে তথা সুখের অংশীদার হতে চায়, দুঃখের নয়।
ভালো থাকাটা পুরো নির্ভর করে আপনার নিজের উপর অর্থাৎ আপনি কীভাবে ভালো থাকতে
চান। তবে নীতি পরিপন্থী বা নীতি বহির্ভূত হয়ে ভালো থাকাকে ভালো থাকা বলে না। নিজের
মাঝে একটু পরিবর্তন আনা গেলেই ভালো থাকার স্বাদ উপভোগ করা যায়। এই পরিবর্তনের
পিছনের খুব মেধা বা শ্রমের প্রয়োজন হয় না। শুধু সদিচ্ছার প্রয়োজন। সদিচ্ছাই আপনাকে
ভালো থাকার পথ বাতলে দেবে। নিজের দৃষ্টিভঙ্গি-রুচি-চিন্তা ও মনের মাঝে পরিবর্তন
আনা গেলেই ভালো থাকার সুখটা ভালো ভাবে উপভোগ করা যায়। তাই বলি কি- আপনার ভালো
থাকার চর্চা এভাবে হতে পারে।
১। নিয়মিত প্রার্থনা করুন। আপন প্রভুর নিকট নিজকে সমর্পন করুন। নিজের যত চাওয়া
বিধাতার নিকট নিবেদন করুন। যতটুকু প্রাপ্তি আছে তা স্মরন করে সৃষ্টিকর্তাকে
অভিনন্দন জানান। সংগোপনে নিজের সমগ্রটুকু ঈশ্বরের নিকট সুঁপে দিন। কাঁদুন। অস্রু
জড়ান। অবশ্যই ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করবেন।
২। প্রত্যহ ব্যায়াম করুন। ব্যায়াম আপনাকে সতেজ ও সজীব রাখবে।একঘেয়েমিতা দূর
করে কর্মে এনে দেবে স্বতঃস্ফূর্ততা।
৩। পরিবারের সদেস্যদের সময় দিন। তাদের ভাল লাগা-ভাল না লাগার বিষয়গুলো জানুন।
নিজের পছন্দ-অপছন্দ তাদের নিকট শেয়ার করুন।
৪। নিজকে নিবেদিত প্রানের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলতে প্রতিদিন লক্ষ্য অভিমুখে
ছুটে চলুন। চারিত্রিক সৌন্দর্য বিনির্মানে নিজের সাথে সংকল্পবদ্ধ হউন। ক্ষমাশীলতা, আন্তরিকতা, বদান্যতা ও শ্রদ্ধাবোধ গুণগুলোকে আপন করে
নিন।
৫। মন্দ অভ্যাসগুলো ত্যাগ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হউন। প্রতিদিন একটি একটি করে
মন্দ অভ্যাস ঝেড়ে ফেলুন। মনে রাখবেন- কেউ যদি কোনো একটি বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়, তাহলে শয়তান তার পিছু ছাড়ে না। আপনি কুমন্ত্রনা পাবেন। তবে আপনাকে আপনার পথে
অটল ও অবিচল থাকতে হবে।
৬। নিজকে সময় দিন। নিজের সাথে প্রান খুলে কথা বলুন। নিজকে ভালবাসুন। নিজের
সাথে প্রেম করুন। দেখুন, দু’চোখ মেলে দেখুন- আপনি ভিন্ন সুখী কে আছে ধরায়?
৭। প্রতিদিন ভালো কাজ করার সংকল্প করুন। কাজ শেষে নিজকে অভিনন্দন দিন।
৮। হতাশ না হয়ে নিজের ভাগ্যের উপর বিশ্বাস রাখুন কারন ভাগ্যের বদৌলতে যেমন
আপনি অনেক কিছু পেয়েছেন তেমনি এর ধারাবাহিকতায় অনেক কিছু হারাতে হতে পারে। তবে
কোনো কিছু চিরস্থয়ী নয়; ভাগ্যের পরিক্রমায় সুখ-দুঃখ আবর্তিত হয়। আর তা মেনে নেওয়ার নামই জীবন।
৯। অন্যের কৃতিত্ব, সার্থকতা ও সৌন্দর্যের সাথে নিজকে তুলনা করা
থেকে বিরত থাকুন। মনে রাখবেন- পৃথিবীর পুরো সৌন্দর্যে আপনার কিয়াদংশ সৌন্দর্যও
বিদ্যমান। আপনার সৌন্দর্য ছাড়া পৃথিবীর প্রকৃত সৌন্দর্য অপরিপূর্ন।
১০। কাউকে খুশি করার জন্য কথা বলবেন না। সবসময় নিজের কথা বলুন। প্রানের কথা
বলুন। হৃদয়ের কথা বলুন। নিজের কথা নিজের মতো করে বলতে পারা- আপনাকে পৌঁছে দিবে
অনন্য উচ্চতায়।
১১। সব কাজে আমিই শুধু ফার্স্ট হব বা আমাকেই ফার্স্ট হতে হবে। এ ধরনের চিন্তা
পরিহার করুন। তাতে আপনার মনের উপর আপনার একচ্ছত্র আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রন থাকবে।
১২। নিজের কাছে সৎ থাকার চর্চা করুন। যেটা খুবই কঠিন। কিন্তু আপনি’তো মানুষ। সকল ধরনের অনন্যতা ও অসাধারণত্ব আপনাতে বিরাজমান। আপনি কেন মুখোশ
পরে গাঁ ঢাকা দিয়ে চলবেন? বরং সমস্ত কুৎসিত জিনিস আপনার সততার নিকট গাঁ
ঢাকা দিবে। কারন সততাই শক্তি। তাই নিজকে বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিন; জবাবদিহিতার সম্মুখীন করুন।
১৩। অন্যের নিকট থেকে প্রত্যাশা কমিয়ে ফেলুন। আপনি যত বেশি প্রত্যাশা করবেন, ততবেশি কষ্ট পাবেন। কারন সে’তো আর আপনার মতো না। এ পৃথিবীতে কেউ কারো মতো
নয়। তাই অন্যকে নিজের মতো করে ভাবাও ঠিক নয়।
১৪। অন্যরা আপনাকে নিয়ে কি ভাবে; তা নিয়ে চিন্তা করে সময় অপচয় করা নির্বুদ্ধিতার কাজ।
সময়কে কাজে লাগিয়ে নিজের কাজকে প্রাধান্য দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
১৫। প্রচুর পরিমাণে হাসুন এবং সবসময় হাসিখুশী থাকার অভ্যাস করুন। সেই সাথে
অন্যদেরকেও হাসিখুশী রাখতে চেষ্টা করুন। হাসি আপনাকে প্রফুল্ল রাখতে সাহায্য করবে।
দিনকে করে তুলবে আনন্দময়।
১৬। শত্রুতা এবং অন্যের প্রতি ঘৃণা বজায় রাখবেন না। এতে কেবল দুঃশ্চিন্তা
বাড়ে এবং মানসিক শান্তি নষ্ট হয়। বরং ক্ষমাশীল হন। ক্ষমাশীল হওয়া জীবনের সবচাইতে
বড় গুণ। যখন অন্যের অপরাধ ক্ষমা করে দিতে পারবেন তখন আপনি নিজেই অনুভব করতে পারবেন
যে আপনি পৃথিবীর সবচাইতে সুখী মানুষ।
১৭। আজকের জন্য ভালো থাকুন। সুদূর ভবিষ্যৎের কথা চিন্তা করে আজকের ভালো থাকার
সুখটাকে তিক্ত করবেন না। কারন সেই মানুষই সবার চেয়ে সুখী, যিনি আজকের দিনকে নিজের বলতে পারেন।
১৮। অনিশ্চিত কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত হওয়া যাবে না। সর্বদা নিজকে দুশ্চিন্তা
মুক্ত রাখুন; ভাল থাকতে হলে আপনাকে অবশ্যই দুশ্চিন্তা
মুক্ত থাকতে হবে। দুশ্চিন্তা চলে এলেও তাকে ঝেড়ে ফেলে দিন। ভাবুন- দুশ্চিন্তার এমন
কি সাধ্য যে আমাকে বশীভূত করে। আর দুশ্চিন্তাকে এড়িয়ে চলার সহজ উপায় হলো; জীবনে যা ঘটবে এবং যা ঘটে গেছে তা মেনে নেয়া। কারণ ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে মেনে
নিলেই দুর্ভাগ্যকে অতিক্রম করা যায়।
আলহামদুলিল্লা..
ReplyDeleteঅনেক ভাল লেগেছে
বাস্তব জীবনে কথাগুলো বাস্তবায়িত করাটা অবশ্যই কঠিন । তবে 'Practice makes a man perfect' অভ্যাসে জড়িয়ে নিলে হবে সহজ ।
ReplyDeletenice
ReplyDelete