আমি নির্ভীক দ্বিধাহীন হয়ে মৃত্যু থেকে মহাশশান পর্যন্ত নিজকে সঁপি তোমার সুখাসীন আঙ্গিনায় তীব্র মোহ নির্দয় পথে সমাসীন করে তোমা...
উচ্ছ্বাসিত জীবন সমুদ্র
আমি নির্ভীক দ্বিধাহীন হয়ে
মৃত্যু থেকে মহাশশান পর্যন্ত
নিজকে সঁপি তোমার সুখাসীন আঙ্গিনায়
তীব্র মোহ নির্দয় পথে সমাসীন করে
তোমার উর্মি মুখরিত উন্মক্ত জীবন স্রোতে
আমাকে খুঁজে ফিরি
কখনো বা খুঁজে পাই
কখনো বা হারাই
তবুও তোমাতে নিত্যবসবাস
তোমার সহযাত্রী তোমারই সহচর
তোমার লজ্জাশোভিত রক্তিম মুখে সৌন্দর্যের শশী ছন্দোবদ্ধ হয়
ভয় আর নম্র ভালোবাসার শুভ্র রূপ আমাকে আচ্ছন্ন করে
কিন্তু আমি নির্ভয়; তোমার অন্তর্যামী সংগীত সুরে
অনন্তকাল তোমার অলকে বাঁধনহারা
মুক্তির দুয়াড়ে দাঁড়িয়ে বিজয় অভ্যুত্থান তোমায় ঘিরে
তোমার হৃদয় হরিৎ উপত্যকায়
অন্তিম সুরে বাজানো বাঁশি
আমার আদিসৃষ্ট প্রেমান্ধ হৃদয় সত্ত্বাকে করে তোমার ভালোবাসাস্নাত
আর বৃষ্টি ক্লান্ত আষাঢ় সন্ধ্যায়
তোমার নিভৃতনিলয় সুখের নীলাম্বরে আলোর স্ফুলিঙ্গ
আমার চেতনায় বিমূর্ত, চিরঞ্জীব।
বক্ষমাঝে তোমার অচেনা তরীর অবগাহন
সযত্নে শীতল করে দেয়-
আমার উচ্ছ্বাসিত জীবন সমুদ্র।
আমি তার’ই মাঝে নীল, বর্ণিল।
আমি তার’ই মাঝে গাঢ়, তোমাতে অমলিন।তোমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “পৃথিবীর সমস্ত সুখ কোথায়?” উত্তরে তুমি বলেছিলে, “যেখানে হৃদয় শান্তি পায়।” তোমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “আ...
তোমার উত্তর
তোমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “পৃথিবীর সমস্ত সুখ কোথায়?”
উত্তরে তুমি বলেছিলে, “যেখানে হৃদয় শান্তি পায়।”
তোমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “আপনি কার সঙ্গ চান?”
উত্তরে তুমি বলেছিলে, “যে দূরে ঠেলিয়া মুহূর্তেই কাছে টানিয়া লয়।”
তোমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “কোথায় মৃত্যু অবধি থাকতে চান?”
উত্তরে তুমি বলেছিলে, “যেথায় মায়ের কোলের মতো উষ্ণতা পাওয়া যায়।”
তোমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “ভালোবাসা যায় কীভাবে?”
উত্তরে তুমি বলেছিলে, “ক্ষনিকের জন্য আড়াল হলে হারিয়ে ফেলার ভয়ে।”
তোমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “চির সুন্দর বস্তু কী?”
উত্তরে তুমি বলেছিলে, “মানবের প্রশস্ত মন।”
তোমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “জীবনের সফলতা কোথায়?”
উত্তরে তুমি বলেছিলে, “সকলের বিনম্র শ্রদ্ধায়।”
তোমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “ঈশ্বর কাকে ভালবাসেন?”
উত্তরে তুমি বলেছিলে, “যে নিস্বার্থ সৃষ্টিকে ভালবাসে।”
তোমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “আপনি কেমন পৃথিবীর প্রত্যাশী?”
উত্তরে তুমি বলেছিলে, “উর্বর ভূমি, চির সরল প্রকৃতি আর ইচ্ছার বৃষ্টির পৃথিবী।”
তোমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “আপনি কেমন আছেন?”
তুমি নিরব ছিলে।।
আজ, আকাশে-মেঘে প্রেম, সাগর-নদীতে প্রেম শ্বাপদ-অরণ্যে প্রেম, ঝর্না-গিরিতে প্রেম আচ্ছা, প্রেমে পড়লে কি হয়? মানুষ বোকা হয় খ...
প্রেমে পড়লে কি হয়
আজ,
আকাশে-মেঘে প্রেম, সাগর-নদীতে প্রেম
শ্বাপদ-অরণ্যে প্রেম, ঝর্না-গিরিতে প্রেম
আচ্ছা, প্রেমে পড়লে কি হয়?
মানুষ বোকা হয়
খনিকের জন্য অবসর পেলে স্বপ্নলোকে হারায়
পৌষের শীতে চিলেকাঠে উষ্ণতা খোঁজে না
গান গায়, একা একা কথা বলে
ছবি আঁকে, কবিতা লিখে।
প্রেমে পড়লে-
নতুন সৌন্দর্যানুভূতির জন্ম হয়
সদ্য প্রসবজাত সৌন্দর্যানুভূতি
যাকে একটু ছোঁয়ে দিলে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা খুব।
প্রেমে পড়লে-
হৃদয়ে ক্ষরণ হয়, মনে প্লাবন হয়
রংধুন আপাদমস্তক রঙ মেখে যায়
চোখে ঘুম আসে না
ক্লান্তিরা জলপ্রপাত দেখার অবকাশে যায়।
প্রেমে পড়লে-
সূর্যের বুকে একবার হানা দিতে মন চায়
মেঘমালায় ভেসে বেড়ানোর ইচ্ছা জাগে
মাঝ নদীতে ঝড়ের আতঙ্ক- শঙ্কিত করে না।
প্রেমে পড়লে-
পাখির কুহতান ভালো লাগে, ভালো লাগে জনমানবের কোলাহল
কারখানার শব্দে আর বিরক্তি আসে না
আকাশ-কুসুম স্বপ্ন শালিকের মতো এসে ভিড় করে;
মনের জানালায়।
প্রেমে পড়লে-
ফুল ভালো লাগে, ভালো লাগে ভ্রমরের গুঞ্জন
ঝি-ঝি পোকার চিৎকার, জোনাকীর আলো
ভালো লাগে রাখালের বাঁশির সুর
ভালো লাগে শিশির ভেজা নির্মল ভোর।
প্রেমে পড়লে-
মানুষ অবচেতন হয়
বিভোর থাকে কল্পনা রাজ্যে
ভালো লাগে নিজকে ঈশ্বরের নিকট সঁপে দিয়ে করিতে আরাধনা
ভালো লাগে উন্মুক্ত রাস্তায় উলঙ্গ শিশুর উন্মাদনা।
আচ্ছা প্রেমে পড়লে আর কি হয়?
প্রেমে পড়লে-
হৃদয়ে বর্ষা আসে, মনেতে জোয়ার আসে
জ্যোৎস্না আসে, উত্তরের মৃদু হিম শীতল বাতাস আসে
নবান্ন আসে, পিঠা-পুলির উৎসব আসে
জ্ঞান আসে, ধ্যান আসে।
প্রেমে পড়লে-
কয়েদীরা কারাগার ছেড়ে পালায়
জলদস্যু যজ্ঞ করে
ফাঁসির মঞ্ছে দাঁড়িয়ে হাসিতে হাসিতে
চোখ বেয়ে জল পরে।
প্রেম পড়লে-
বাবুই পাখির কুঁড়ে ঘরের দিকে তাকিয়ে
অনন্তকাল কাটিয়ে দেওয়া যায়।
বারবার মৃত্যু হলেও
এ হৃদয় এ দেহে থেকে যায়।
প্রেমে পড়লে-
শহরের বর্নহীন নিস্তেজ পত্রপল্লব প্রাণবন্ত মনে হয়
ঢেউয়ের তোড়ে নৌকর গুলয়ে দাঁড়িয়ে দোল খেতে
মনে লাগে না কোন ভয়।
আষাঢ়ের বৃষ্টিতে অবিরত ভিজে শরীরে আসে না জ্বর
কোনো অশুভ শক্তি এসে করিতে পারে না;
সমস্ত গাঁ জুড়িয়ে ভর।
প্রেমে পড়লে-
মৃত কৃষ্ণচূড়া গাছে ফুল ফোটে
গাঢ় টকটকে লাল ফুল
রজনীগন্ধারা দিনের বেলায় সুভাস ছড়ায়
বকুল তলার স্যাঁতস্যাঁতে মাটি
শীতলপাটি হয়ে যায়।
প্রেমে পড়লে-
একাকীত্ব ভালো লাগে
জ্যোৎস্না শোভিত রাত্রিতে নৌকর ছাউনির নিচে বসে
চাঁদ দেখতে ভালো লাগে।
নদীর শান্ত-উদার জয়ধ্বনি মন কাড়ে।
প্রেমে পড়লে-
হৃদয়ে জীবনানন্দ আসে, মনেতে রবী বাবু আসে
ভূ-মধ্যসাগরের জল আসে, আগ্নেয়গিরির বল আসে
শুদ্ধতা আসে, মুগ্ধতা আসে
মান আসে, অভিমান আসে।
প্রেমে পড়লে-
দেহ শীর্ন হয় না
শ্বেত রক্তকনিকা রোগ্ন হয় না
কন্ঠসুর রুদ্ধ হয় না
ষড়রিপুতে যুদ্ধ হয় না।
প্রেমে পড়লে-
সমস্ত গাঁ জুড়ে যদিবা থাকেও গয়না
হাজারো বিশেষণে- “প্রেম” বিশেষায়ন হয় না।
আচ্ছা,প্রেমে পড়লে কি আদৌ কিছু হয়?
হ্যাঁ, হয়-
বিশেষণের বিশেষায়নের
অতিশায়ন। বিশ্বাস মানুষের সবচেয়ে বড় শক্তি। যদিও ক্ষমাশীলতাকে বড় শক্তি বলা হয়। তবুও বিশ্বাসের মতো দুর্ভেদ্য শক্তিকে ছাপিয়ে নয়। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ...
বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ভগ্নাবশেষ
বিশ্বাস মানুষের সবচেয়ে বড় শক্তি। যদিও
ক্ষমাশীলতাকে বড় শক্তি বলা হয়। তবুও বিশ্বাসের মতো দুর্ভেদ্য শক্তিকে ছাপিয়ে নয়।
বিশ্বাস-অবিশ্বাসের খেলাঘরে কাউকে বিশ্বাস করা যেমন কঠিন; করো নিকট বিশ্বস্ত হওয়ায় তেমন কঠিন।
বিশ্বাসকে পুঁজি করে মানুষ ঠকানোর লোক সংখ্যায় বেশি; সেই তুলনায় বিশ্বাসকে প্রাধান্য দিয়ে আপন চাওয়াকে বিসর্জন দেওয়ার মানুষ
নিতান্তই কম। বিশ্বাস এমন এক শক্তি যেটা কিনা ব্যক্তিকে খুব গৌরব ও অর্জনের দাবী
নিয়ে আপন চাওয়ার অভিমুখে ঠেলে দেয়। যেন এগুলো পাওয়া তার একান্তই কাম্য ছিল। মানুষ
চাইলেই কি, যে কোনো ব্যক্তি, বিষয় বা বস্তুকে বিশ্বাস করে কিংবা আপন করে নিতে পারে? পারে না। আবার এ বিশ্বাসই তাসের ঘরের মতো
সবচেয়ে ভঙ্গুর। এখানেই বিশ্বাসের চুলচেরা বৈপরিত্য ফুটে উঠে।
বিশ্বাস করতে বা বিশ্বস্ত হতে হলে যেমন প্রতিটি
মুহূর্তকে তাৎপর্যপূর্ন করে গড়ে নিতে হয়। সময়ের পিছনে শ্রম ব্যয় করতে হয়। তেমনি এ
বিশ্বাসে একবার ঘুন ধরলে পুরো বিশ্বাসের দরজায় ঘুন পোকার বিস্তার ঘটে। বিশ্বাস নামক দরজার পিছনেই অবস্থান করে অবিশ্বাস। আর অবিশ্বাসের মূলে রয়েছে সন্দেহ অথবা চরম
বাস্তবতা। অবিশ্বাসের চেয়ে বিশ্বাস করা শ্রেয়। তবে মিথ্যা বা অশুভ শক্তিকে নয়।
কেননা বিশ্বাস অনেকটা ঠুনকো। একে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। প্রতিপালন করতে হয়। কারন দিন
শেষে বিশ্বাস ব্যক্তিকে আশাবাদী করে। হাজার বছর বেঁচে থাকার ইচ্ছা জাগায়। অনন্য
হয়ে বাঁচতে শেখায়।
বর্তমানে দেখা যায়, বেশির ভাগ সম্পর্ক দীর্ঘ
দিন স্থায়ী হয় না। কিন্তু এই সম্পর্কগুলো কিছু দিন আগেই’তো কত পরিমার্জিত, কত সুন্দর, গোছানো ও নির্মল ছিল।
তাহলে হঠাৎ তাদের মাঝে সম্পর্কের যবানিকাপাতের সিদ্ধান্ত আসে কেন? এর পিছনে বৃহৎ
কোনো কারন নেই। একমাত্র কারন হল দুজন দুজনকে বিশ্বাস করতে না পারা। অনেকে বলে
দুজনের মানসিকতার বৈসাদৃশ্য বা বৈপরীত্য। এই যে মানসিকতার ভিন্নতা- তা কি অবিশ্বাস
থেকে সৃষ্টি হয়নি? অবিশ্বাস যখন পেয়ে বসে, তখন সবকিছুতে
বিশ্বাসহীনতার চর্চা নিজের প্রতি নিজকে অবিশ্বস্ত করে তোলে। সম্পর্ক মধুর হওয়ার
পিছনে বিশ্বাস একান্ত জরুরী। বাস্তব জীবনে চলার ক্ষেত্রেও এর বিকল্প কিছু নেই। জন
মিলটনের একটি বিখ্যাত উক্তি রয়েছে, “বিশ্বাস
জীবনকে গতিময়তা দান করে, আর
অবিশ্বাস জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। জীবনকে সহজ সরল স্বাভাবিক ও সুন্দরভাবে
উদযাপনে বিশ্বাস-চর্চা অপরিহার্য। ঘরে-বাহিরে, অফিস-আদালত, ব্যবসা-বানিজ্যে
সর্বক্ষেত্রে এর চর্চা এনে দিতে পারে জীবনের প্রকৃত স্বাদ। আত্নার আত্নিক তুষ্টতা
ও মনের পরিতৃপ্তি।
দাম্পত্য বা সম্পর্কের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়য়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুলতানা
আলগিন মনে করেন, ‘প্রেম কতটা পেলাম— সেটাই
একমাত্র বিবেচ্য নয়। তার চেয়েও বড় কথা, আমি কতটা ভালোবাসলাম।’ কবি জর্জ
এলিয়টের এই কথা সেই দিনে মনে পড়বে সবারই। ও প্রেম করতে দুই দিন ভাঙতে এক দিন, এমন প্রেম আর কইরো না
দরদি—এই
লোকগানে প্রেমিক-প্রেমিকার সম্পর্কে যেকোনো শঠতা-হঠকারিতার অবকাশ নেই, তা স্পষ্টই বলা হয়েছে। বলা
হয়, প্রেম আসে
স্বর্গ থেকে। এই স্বর্গীয় বিষয়কে হেলাফেলা করা ঠিক হবে না। বরং এর পবিত্রতাকে
কীভাবে রক্ষা করা যায়, সে দিকে
নজর দেওয়াই হবে বিবেচকের কাজ। প্রেমিক-প্রেমিকা বা স্বামী-স্ত্রী যে কেউ হোক—সব যুগলের প্রেমের মূলমন্ত্র হচ্ছে পরস্পরের
প্রতি বিশ্বাস। যত জটিলতাই তৈরি হোক না কেন, ঝড়ঝাপটা
যাই আসুক না কেন—কেউ যেন
বিশ্বাসচ্যুত না হয়। এই বিশ্বাস বিয়ের আগে বা পরে বলে কোনো কথা নেই। এই বিশ্বাস
হবে সব সময়ের জন্য। বন্ধন হতে হবে ইস্পাতদৃঢ়। সব রকমের সম্পর্কের মধ্যে থাকবে
বন্ধুসুলভ সমঝোতা। বন্ধুত্ব হবে পানির মতো টলটলে পরিষ্কার।
প্রকৃত অর্থে বিশ্বাসীগণই জয়ী। পক্ষান্তরে
অবিশ্বাসীগন ধোঁয়ার অন্ধকারে অবিশ্বাসের ছত্রছায়ায় পরাজিত হয়। বিশ্বাসের দেয়াল যখন
নিজকে ঘিরে তৈরি হয়, তা হয়ে উঠে
দূর্বার। তখন যেন সব অসাধ্য সাধন হয়ে যায়, সব
অপ্রাপ্তি চোখের পলকেই প্রাপ্ত হয়ে যায়। সর্বোপরি নিজের ভিতরে এক ধরনের অলৌকিক
আলোর স্ফুলিঙ্গ অনুভূত হয়। যেন সকল সম্ভাবনার দ্বার আজ উন্মুক্ত। আমি যেখানে খুশি
গমন করতে পারি; করতে পারি
পৃথিবীর জমিনে অবাধ বিচরন। কিন্তু যখন আপন বিশ্বাস আপনাকে হারিয়ে দেবে, তখন অবিশ্বাসের একটি
অশরীরী ছায়া সর্বদা আপনাকে ঘিরে রাখবে, ভয় দেখাবে, অকারনে সন্দেহ সৃষ্টি করবে
ও কুমন্ত্রণা দিবে। আপনার শরীরে গেঁথে দিতে চাইবে, এক একটি
অবিশ্বাসের বীজ। তাই আপন বিশ্বাস যদিবা ভেঙ্গে যায়, তাহলে ধরে
নিতে হবে- আমি পরাজিত নই। আমার বিশ্বাসও পরাজিত নয়। আমি ও আমার বিশ্বাস সত্য
জেনেছি। আমার বিশ্বাস আমাকে সত্যের সাথে আলিঙ্গনের সুযোগ করে দিয়েছে।
যে মানব সন্তান তার সৃষ্টিকর্তার প্রতি অগাধ
বিশ্বাস স্থাপন করে; তার জন্য
তার সৃষ্টিকর্তাই যথেষ্ট। মহান আল্লাহ্ তায়লার পয়গম্বর ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ তার
উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। নমরুদকে প্রভু না মানার অপরাধে ইবরাহীমকে শাস্তি স্বরূপ নমরুদ একটা ভিত নির্মাণ করে এবং
সেখানে বিরাট অগ্নিকুন্ড তৈরী করে। তারপর সেখানে ইবরাহীমকে নিক্ষেপ করা হয়।
জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপের সময় ইবরাহীম (আঃ) বলে ওঠেন, ‘আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।
তিনি কতই না সুন্দর তত্ত্বাবধায়ক’ । সেই
অদ্বিতীয় মহান সৃষ্টিকর্তাই তখন বললেন ‘হে আগুন! ঠান্ডা হয়ে যাও এবং ইবরাহীমের উপরে
শান্তিদায়ক হয়ে যাও’ এভাবেই
মহান আল্লাহ্ তায়লা তার অনুগত ও তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী বান্দাদের বাঁচিয়ে
দেন। ইবরাহীম (আঃ) এর একমাত্র পুত্র ইসমাইল (আঃ) নিয়ে বিশ্ববাসীর নিকট আরো একটি
দৃষ্টিনন্দনীয় বিশ্বাসের উদাহারন রয়েছে। আল্লাহ্ তায়লার নিকট থেকে যখন ইবরাহীমের
কাছে নির্দেশ এলো- তুমি, তোমার
প্রিয় বস্তু কোরবানি কর। তখন ইবরাহীম আঃ প্রান প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে বললেন, হে আমার পুত্র! আমি
স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে
যবহ করছি। এখন বল তোমার অভিমত কি? সে বলল, হে পিতা! আপনাকে যা
নির্দেশ করা হয়েছে, আপনি তা
কার্যকর করুন। আল্লাহ চাহেন তো আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত দেখতে পাবেন’।
এই ঘটনাকে উপজীব্য করে বলা যায়, সন্তানের প্রতি কতটুকু
বিশ্বাস থাকলে একজন পিতা তার সন্তানকে এ কথা বলতে পারেন। এমনকি পিতার প্রতি কতটুকু
বিশ্বাস থাকলে একজন সন্তান তার পিতার এ ধরনের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেন। এগুলো
পৃথিবীতে বিশ্বাসের সুউচ্চ নমুনা।
১৬৩৩ সাল। পৃথিবী নয়, সুর্য তখন পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে। কিন্তু গ্যালিলিও তার নতুন তৈরি করা টেলিস্কোপটির পর্যবেক্ষন বর্ননা করে, যুক্তি-তর্ক দিয়ে আস্ত একটা বই লিখে ফেললেন বাইবেলীয় মতবাদের বিরোধিতা করে। তিনি বললেন- সূর্য নয়, বরং পৃথিবীই ঘুরছে সূর্যকে কেন্দ্র করে, গ্যালিলিও তখন প্রায় অন্ধ, বয়সের ভারে ন্যুজ্ব। অসুস্থ ও বৃদ্ধ বিজ্ঞানীকে জোর করে ফ্লরেন্স থেকে রোমে নিয়ে যাওয়া হলো, হাঁটু ভেঙ্গে সবার সামনে জোড়হাতে ক্ষমা প্রার্থনা করিয়ে বলতে বাধ্য করা হলো, এতদিন গালিলিও যা প্রচার করেছে তা ধর্মবিরধী, ভুল ও মিথ্যা। বাইবেলে যা বলা আছে সেতাই আসল, সঠিক। পৃথিবী স্থির-অনড় সৌরজগতের কেন্দ্রে। এখানে তার বিশ্বাসকে ধাবিয়ে রাখা হলেও পৃথিবীতে আজও মানুষ তার বিশ্বাসকে ধারন করে আছে। তার বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরে মানুষ একের পর এক আবিষ্কার করেই চলছে। যদিও ঐ সময়ে তার বিশ্বাস কে ধূলিসাৎ করা হয়েছিল। কিন্তু তার বিশ্বাসের কারনেই আজ তিনি বেঁচে আছেন। মিথ্যা অভিযোগ এনে হেমলক পানে মৃত্যু হলেও সক্রেটিস আজ বেঁচে আছেন তার জ্ঞানের প্রতি বিশ্বাসের বদৌলতে।
আব্রাহাম লিংকনের একটি জনপ্রিয় উক্তি রয়েছে, “ সবাইকে বিশ্বাস করা যেমন বিপদজনক, তেমনি সবাইকে
অবিশ্বাস করা আরো বেশি বিপদজনক।
পবিত্র কোরআনে সূরা আল আসরে উল্লেখ্য রয়েছে, “ফুরিয়ে যাওয়া সময়ের শপথ। মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। তবে তারা নয়, যারা বিশ্বাস করে, ভালো কাজ করে, একে অন্যকে সত্যের প্রতি
তাগাদা দেয় এবং ধৈর্য-নিষ্ঠ হতে তাগাদা দেয়।” পরিশেষে
বলা যায়, সর্বক্ষত্রে বিশ্বাসকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
তাই বিবেককে কাজে লাগিয়ে অবিশ্বাসের চেয়ে বিশ্বাস করাই অত্যাবশ্যক ও জরুরী।
বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ভগ্নাবশেষের ইতি টানবো
কাজী নজরুল ইসলামের “বিশ্বাস ও
আশা” নামক কবিতা
দিয়েঃ
বিশ্বাস আর আশা যার নাই, যেয়ো না তাহার কাছে
নড়াচড়া করে, তবুও সে
মড়া, জ্যান্তে
সে মরিয়াছে।
শয়তান তারে শেষ করিয়াছে, ইমান লয়েছে কেড়ে,
পরাণ গিয়াছে মৃত্যুপুরীতে ভয়ে তার দেহ ছেড়ে।
থাকুক অভাব দারিদ্র্য ঋণ রোগ শোক লাঞ্ছনা,
যুদ্ধ না ক’রে তাহাদের
সাথে নিরাশায় মরিও না।
ভিতরে শত্রু ভয়ের ভ্রান্তি মিথ্যা ও অহেতুক
নিরাশায় হয় পরাজয় যার তাহার নিত্য দুখ।
“হয়ত কী
হবে” এই ভেবে
যারা ঘরে ব’সে কাঁপে
ভয়ে,
জীবনের রণে নিত্য তারাই আছে পরাজিত হয়ে।
তারাই বন্দী হয়ে আছে গ্লানি অধীনতা কারাগারে;
তারাই নিত্য জ্বালায় পিত্ত অসহায় অবিচারে!
এরা আকারণ ভয়ে ভীত, এরা দুর্বল নির্বোধ,
ইহাদের দেখে দুঃখের চেয়ে জাগে মনে বেশী ক্রোধ।
এরা নির্বোধ, না ক’রে কিছুই জিভ মেলে প’ড়ে আছে,
গোরস্তানেও ফুল ফোটে, ফুল ফোটে না এ মরা গাছে।
এদের মুক্তি অদৃষ্টবাদ, ব’সে ব’সে ভাবে
একা,
‘এ মোর
নিয়তি’ বদলানো
নাহি যায় কপালের লেখা!
পৌরুষ এরা মানে না, নিজেরে দেয় শুধু ধিক্কার,
দুর্ভাগ্যের সাথে নাহি লড়ে মেনেছে ইহারা হার।
এরা জড়, এরা
ব্যাধিগ্রস্ত, মিশো না
এদের সাথে,
মৃত্যুর উচ্ছিষ্ট আবর্জনা এরা দুনিয়াতে।
এদের ভিতরে ব্যাধি, ইহাদের দশদিক তমোময়,
চোখ বুঁজে থাকে, আলো
দেখিয়াও বলে, ‘ইহা আলো
নয়।’
প্রবল অটল বিশ্বাস যার নিঃশ্বাস প্রশ্বাসে,
যৌবন আর জীবনের ঢেউ কল-তরঙ্গে আসে,
মরা মৃত্তিকা করে প্রাণায়িত শস্যে কুসুমে ফলে,
কোনো বাধা তার রুধে না ক পথ, কেবল সুমুখে চলে।
চির-নির্ভয়, পরাজয় তার
জয়ের স্বর্গ-সিঁড়ি,
আশার আলোক দেখে তত, যত আসে দুর্দিন ঘিরি’।
সেই পাইয়াছে পরম আশার আলো, যায়ো তারি কাছে,
তাহারি নিকটে ম্রিত্তুঞ্জয়ী আভয়-কবচ আছে।
যারা বৃহতের কল্পনা করে, মহৎ স্বপ্ন দেখে,
তারাই মহৎ কল্যাণ এই ধরায় এনেছে ডেকে।
আসম্ভবের অভিযান-পথ তারাই দেখায় নরে,
সর্বসৃষ্টি ফেরেশতারেও তারা বশীভূত করে।
আত্মা থাকিতে দেহে যারা সহে আত্ম- নির্যাতন,
নির্যাতকেরে বধিতে যাহারা করে না পরাণ-পণ,
তাহারা বদ্ধ জীব পশু সন, তাহারা মানুষ নয়,
তাদেরই নিরাশা মানুষের আশা ভরসা করিছে লয়।
হাত-পা পাইয়া কর্ম করে না কূর্ম-ধর্মী হয়ে,
রহে কাদা-জলে মুখ লুকাইয়া আঁধার বিবরে ভয়ে,
তাহারা মানব-ধর্ম ত্যজিয়া জড়ের ধর্ম লয়,
তাদের গোরস্তান শ্মশানে, আমাদের কেহ নয়।
আমি বলি শোনো মানুষ! পূর্ণ হওয়ার সাধনা করো,
দেখিবে তাহারি প্রতাপে বিশ্ব কাঁপিতেছে থরোথরো!
ইহা আল্লার বাণী যে, মানুষ যাহা চায় তাহা পায়,
এই মানুষের হাত পা চক্ষু আল্লার হয়ে যায়!
চাওয়া যদি হয় বৃহৎ, বৃহৎ সাধনাও তার হয়,
তাহারি দুয়ারে প্রতীক্ষা করে নিত্য সর্বজয়।
অধৈর্য নাহি আসে কোনো মহাবিপদে সে সেনানীর,
অটল শান্ত সমাহিত সেই অগ্রনায়ক বীর।
নিরানন্দের মাঝে আল্লার আনন্দ সেই আনে,
চাঁদের মতন তার প্রেম জনগণ-সমুদ্রে টানে।
অসম সাহস বুকে তার আসে আভিয় সঙ্গ ক’রে,
নিত্য জয়ের পথে চলো সেই পথিকের হাত ধ’রে।
পূর্ণ পরম বিশ্বাসী হও, যাহা চাও পাবে তাই;
তাহারে ছুঁয়ো না, সেই মরিয়াছে, বিশ্বাস যার নাই!!
Subscribe to:
Comments (Atom)
0 comments: