ধরুন, কস্মিনকালে দৈবক্রমে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও অর্থমন্ত্রীর মাঝে নিবিড় একটি সম্পর্ক গড়ে উঠেছে । সেই সম্পর্কের...
মির্জা ফখরুল ও অর্থমন্ত্রীর প্রণয় উপাখ্যান
ধরুন, কস্মিনকালে দৈবক্রমে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা
ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও অর্থমন্ত্রীর মাঝে নিবিড় একটি সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। সেই সম্পর্কের গভীরতা এতই গভীর যে দু’জন দুজনকে এক মুহূর্ত
না দেখে থাকতে পারে না। কি খাওয়া, কি দাওয়া, দু’জন
দু’জনার চিন্তায় আত্নমগ্ন থাকে। সারাদিন-সারারাত। যদি কেউ একজন কোনো একটি আঘাত পায়- আরেকজন সেই
আঘাতের বেদনা অনুভব করে, একজন আনন্দ পেলে আরেকজন সেই আনন্দের সুখ অনুভব করে। আরো কত কি।
দু’জন একসাথে বৃষ্টিতে ভিজে, কোনো এক গভীর অরণ্যে
গিয়ে পেটপুরে মধ্যাহ্নভোজন করে, মাঝে মাঝে মনের অজান্তেই বেরিয়ে পরে লং-ড্রাইভ এ। আহা!ঐ ভ্রমনে তাদের কি পাগলামি, খুনসুটি, ছেলেমানুষি। পরস্পর পরস্পরকে বাহুডোরে
আগলে রেখে অতীত ইতিহাসের অবাক্ত বাক্য তোলে- অশ্রুজলে বুক ভাসিয়ে তবেই আলিঙ্গন
ভাঙ্গে।
পৃথিবীতে সবচেয়ে স্থায়ী বন্ধন নাকি পরকীয়া। সেই বন্ধনও তাদের প্রনয়ের কাছে নিছক কুশল বিনিময় মাত্র। রবীন্দ্রনাথ তার বৌদির প্রেমে মত্ত হয়ে যেমন হাজারো
গদ্য-পদ্য লিখে তার প্রেমান্ধ হিয়ার অনুভুতির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। সেই অনুভূতিও তাদের প্রনয়লীলার কাছে ছাইমাত্র।
পাঠক মহল স্বভাবতই তাদের মাঝে গড়ে উঠা প্রীতির
প্রান্ত আবিষ্কার করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। তবে একটু অপেক্ষা করুন- আরো কিছু কথা বলা এখনো বাকী আছে।
ভাবছেন, কার থেকে কার ভালোবাসার মাত্রা বেশি। এটা আমার পক্ষে বলা দুস্কর; অনেকটা ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি
দেওয়ার মতো। তাই প্রশ্নটি আমি এড়িয়ে
গেলাম। কিছু মনে করবেন না। মুখ ফসকে কিছু একটা বলে ফেলা যেতে পারত; তবে তাদের প্রনয়ের
ক্ষেত্রে এই দুঃসাহসের পরিচয় দিয়ে ভালোবাসার নিকট খাটো হতে চাই না। উদ্ভিদ যেমন মাটি থেকে রস আস্বাদন করে বেঁচে থাকে- তেমনি
তাদের ভালোবাসা অলিক সব কল্পনায় যুগ যুগ ধরে টিকে থাকার স্বপ্ন দেখে। সেই স্বপ্নে দুজন অনেকটা সার্থকও বটে। কারন শত ব্যস্ততার মাঝেও তারা পরস্পর পরস্পরকে সময় দেয়। একসাথে clash of clan খেলে। প্রায় সময়ই
মির্জা ফখরুলের চাওয়া ফেলতে না পেরে মুহিতের যেতে হয় শিশুপার্কে। সেখানে দু’জন
দোলনায় দোল খায়। একজন আরেকজনকে বাদাম ছিলে খায়িয়ে দেয়। এভাবেই কাটতে থাকে তাদের
তাদের ঐশ্বরিক প্রেমের নিখুঁত প্রনয় নিঙড়ানো দিনগুলি। মাঝে মাঝে মুহিত বায়না ধরে
তাকে নিয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেন বেরিয়ে আসতে। প্রথমত ফখরুল তা উপেক্ষা করে কিন্তু
যখন মুহিতের চেহাড়া মলিন হয়ে যায়। কেন জানি- ফখরুলের তখন সবকিছুতেই একটা হ্যাঁবোধক
ব্যাপার চলে আসে। একবার মুহিত তার জন্মদিনে ফখরুলকে treat দিবে বলে আজিজ মামার চটপটির দোকানে নিয়ে আসে। কিন্তু ফখরুল বাহিরের খাবারের
সাথে তেমন অভ্যস্ত না। আজিজ মামা “জাল বেশি নাকি কম জিজ্ঞেস” করা মাত্রই মুহিত
উচ্চস্বরে বলল “বেশি” মামা। “স্পেশাল গেস্ট আছে”। সেই চটপটি খেয়ে ফখরুল বাসা থেকে
আগের মতো বের হতে পারেনি। দেখা করতে পারেনি- সাপ্তাহিক শিডিউল অনুযায়ী। তবে
তিনদিনের এই দীর্ঘ বিরতির সাক্ষাতের ভগ্নাংশ সময়ের সমষ্টি উত্তরবঙ্গের বাংলোতে
তারা কাটিয়েছে। সেখানে দুপুরের আহার শেষে তারা পুরোনো দিনের বাংলা গানগুলো ছেড়ে
সচকিত চোখে কথা বিনিময় করে।কথার ফাঁকে ফাঁকে মুহিত ফখরুলের চোখের কোটরে তাকিয়ে
বলে-
“বল, বল, আরো বল, লাগছে মন্দ নয়। হৃদয়ের’ই স্বপ্ন-
ওগো সত্যি যেন হয়।”
পরক্ষণেই ফখরুল, মুহিতের হাত দুটি টেনে নিয়ে মৃদু
সুরে গেয়ে উঠে-
“এ জীবন তোমাকে দিলাম বন্ধু তুমি শুধু ভালোবাসা
দিও।
বন্ধু... তুমি শুধু ভালোবাসা দিও।”
মুহিতের প্রেমের শুরু থেকেই কিছু সংবেদনশীলতা
ছিল।যার ফলে ফখরুলের হাতের স্পর্শের উষ্ণতা সহ্য করতে না পেরে, মুহিত পরক্ষণেই
গেয়ে উঠে-
“এ বুকে বয়েছে যমুনা, নিয়ে অথৈ প্রেমের জল, চারদিকে
গড়ব আমি,
আমার প্রেমের তাজমহল।আমার প্রেমের তাজমহল, ও আমার
প্রেমের তাজমহল।”
এত শালীন-সুন্দর-অস্ফুট-চমকপ্রদ অনুভূতি এর আগে
তারা কেউই ঘরে-মেঝে, বারান্দা, পার্লামেন্টে- এমনকি বিদেশ ভ্রমণে বিমানবালাদের
আদর-আপ্যায়নেও পায়নি। তাই এই সর্গীয় অনুভূতিকে পূর্নতা দিতে তারা দ্বৈত কণ্ঠে গেয়ে
উঠে-“পৃথিবীতে সুখ বলে যদি কিছুই থেকেই থাকে তার নাম ভালোবাসা
তার’ই নাম প্রেম। জ্বলে-পুড়ে মরার মাঝে যদি কিছু
থেকেই থাকে তার নাম ভালোবাসা।তারেই নাম প্রেম।”
মাঝে মাঝে একজনের আড়চোখে তাকানো দেখে আরেকজনের
চেহাড়া লজ্জায় লাল হয়ে উঠে। তখন হাত দিয়ে মুখ ঢেকে আড়াল করে নেয় চেহাড়া। আবার হঠাৎ
চোখাচোখি হয়ে যায় পরস্পরের। তখন পৃথিবীর সব কিছু মিথ্যা মনে হয়- কেবলই সত্য থাকে
তাদের নিস্তব্ধতা। হৃদয়টা নেমে পড়ে পাকস্থলিতে, জিহ্বাটা তালুতে আঁটকে পড়ে।
পৃথিবীর মেরুদ্বয় মুহূর্তের মধ্যে স্থান পরিবর্তন করে নেয়। লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় অতীত
ইতিহাস। কেবল সত্য থাকে তাদের প্রেমস্নাত প্রেম।
এই প্রেম’তো আর ঢাকা থাকে না। সত্য’তো তার নিজস্ব ক্ষমতায় একদিন না একদিন উদঘাঁটিত হয়। সেই সূত্রের
হাত ধরে তা উঠে আসে- প্রিন্ট মিডিয়ায়। টিভি টকশোতে তাঁদের রসায়ন নিয়ে তুমুল
সমালোচনা শুরু হয়। কোনো কোনো উঠতি টিভি চ্যানেল আবার তাঁদের নিয়ে প্রতহ্য শিডিউলে
হাফ অ্যান অ্যাওরের একটা আয়োজন তৈরি করে। সেখানে অনেক শিক্ষাবিদ, সংস্কৃতকর্মী,
অর্থনীতিবিদ, প্রেম বিষায়ক গবেষক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, অভিনেতা-অভিনেত্রী, রাজনীতি
কর্মী এমনকি মাওলানা সাহেবেরা তাদের মূল্যবান বক্তৃতা রাখেন। কেউ কেউ সামগ্রিক ব্যাপারটিকে ইতিবাচক, কেউ বা আবার নেতিবাচক হিসেবে
দেখছেন।
সমাজবিদ মনে করছেন- এ বয়সে তাদের এ ধরনের কর্মকান্ড
সমাজের উঠতি বয়সী তরুন তরুণীদের উস্কে দিবে, ছেলে মেয়েরা উচ্ছন্নে যাবে, সমাজের
অবক্ষয় ঘটবে। ছেলে মেয়েরা যেখানে সেখানে অশালীনতা ও বেহায়াপনা করতে কুণ্ঠিত হবে
না। সর্বত্র জোড়া শালিকদের মিলন মেলায় সমাজের সামগ্রিক উন্নয়ন ব্যাহত ও বাধাগ্রস্থ
হবে।
অর্থনীতিবিদ মনে করছেন- দেশের সামগ্রিক ইকোনমিতে
এটি একটি বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। জিডিপি, জাতীয় রাজস্ব আয়, বৈদেশিক রেমিটেন্স ও
মানব উন্নয়ন সূচক এ দেশকে আরো দু’ধাপ পিছিয়ে দিবে। স্থিতিশীল করে দেবে দেশের ইকোনমিকাল
ডায়াগ্রাম।
ইতিহাসবিদ মনে করছেন- এটা নিছক একটি ইতিহাস। তা
সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। নতুন প্রজন্মকে তা জানাতে হবে কারন এখান থেকে অনেক লার্নিং
আছে।
রাজনীতীবিদ মনে করছেন- এটা বিরোধী দলের চক্রান্ত।
আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। কাল আধা বেলা হরতাল।
শিক্ষাবিদ মনে করছেন- এমনিতে’ই শিক্ষার্থীদের
প্রেমঘটিত ঝামেলা মিটিয়ে শেষ করতে পারিছি না। এর মাঝে যোগ হইছে নতুন ঝামেলা।
সংস্কৃতকর্মীরা পুরো ব্যাপারটিকে ব্যাখ্যা করছেন
এভাবে- পাবলিক যা খেতে চায়, তাকে তা খেতে দেওয়া সামাজিক দায়বদ্ধতা। আর উপর্যুক্ত খাবার না পেলে বদহজমের আশংকা থেকে
যায় জ্যামিতিক হারে এবং লসাগু’র প্রভাবে পরিবেশের উষ্ণতা
বৃদ্ধি পাবে ঐকিক নিয়মে। তাই খাদ্য-অখাদ্য সবই তাদের ইচ্ছাধীন।
টিভি টকশোতে তাদের রসায়ন নিয়ে তুমুল সমালোচনা শুরু
হয়। অনেকে আবার এই বিষয়ে একটি পূনাঙ্গ বই রচনা করার জন্য কিছু সত্য তথ্যাদি খোঁজে
বের করার প্রয়াস অব্যাহত রাখে। নানান কিছু। প্রত্রিকায় বিনোদনের পৃষ্টায় এ খবর
ছাপানো শুরু হয়। যদিও এটি একটি জাতীয় বিষয়। তারপরও গনমাধ্যমে তার স্বাধীনতার প্রশ্ন
টেনে সুযোগটা হাতছাড়া করে না। কিছু কিছু বিজ্ঞাপন নির্মাতা এটা উপর ভিত্তি করে
ভালো ভালো আইডিয়া বের করার চেষ্টা অব্যাহত রাখে। নানান ধান্দা ফিকির।
এসব খবর চারদিকে বাতাসের সাথে মিশে ভেসে বেরাচ্ছে।
তখন কিন্তু মুহিত আর ফুখরুলের মন খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক এবং তাই হল। তবুও তারা
হাল ছেড়ে দেবার পাত্র নয়। “রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব, তবুও এ ভালবাসাকে নিন্দুকের
মুখ থেকে উদ্ধার করে ছাড়বো, ইনশাআল্লাহ্।” দৃঢ় এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে তারা বেরিয়ে
পড়ল- অজানা এক গন্তব্যে। অনেক সাগর-নদী-গিরি-কণ্টকময়-ভিবিষিকাময় পথ পাড়ি দিয়ে তারা
একটি দ্বীপে এসে উপনীত হয়। সেখানে তাদের সুখের নবসূচনা ঘটে। এতটুকু দুঃখ এসে ভীর
করতে পারেনি পরস্পরের মাঝে। কেমন জানি একটি রোমাঞ্চকর অনুভূতি সর্বদা তাদের আগলে
রাখে। ব্যাকুল করে তুলে পরস্পরকে। এমন অনুভূতির মাঝে দিনগুলোকে খুব মিষ্টি মনে হচ্ছিল
তাদের নিকট। মনে হচ্ছিল- বারবার মিষ্টি মুহূর্ত গুলোকে ছোঁয়ে দেই, সমস্ত দেহে
লেপ্টে দেই। মিষ্টি মুহূর্তগুলোকে নিয়ে সর্বদা অভিভূত থাকি দু’জন দু’জনায়।
এভাবেই কাটতে থাকে তাদের দিনগুলো। প্রতিদিনের
সূর্যদয় ও সূর্যাস্ত তারা একজনের পিঠে আরেকজন পিঠ হেলিয়ে একসাথে দেখে আর ভাবে
পৃথিবী আরেক অর্থে সর্গরাজ্য। তা না হলে এত ভালো লাগা কীভাবে সৃষ্টি হয়। কীভাবে হাজার
বৎসর বেঁচে থাকার ইচ্ছা জাগে। পৃথিবী আর কতবারই রূপ বদলায়? আর কতবারই তার রূপের
মুগ্ধতা ছড়ায়? আসল কথা মুহূর্তগুলোই অনভূতি যোগায়, শিহরণ ছড়ায়, মুগ্ধ করে,
ভালবাসতে শেখায়। আরো কত কি? জীবনের প্রকৃত স্বাদটা খুঁজে নিতে হয়। স্বাদটা দুর্লভ
নয়; তবে সহজলভ্যও নয়। স্বাদটা অন্য স্বাদ থেকে আলাদা। এসব চিন্তা করতে করতে মুহিত
জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা, তোমার জীবনের সেরা সময় কোনটা?” ফখরুল তখন একটু হেসে জবাব
দিল, “আমার থেকে তুমি ঢের ভালো জানো।
মুহিত বলল- “আরে ডং করো না’তো।বল।
ফখরুল পরক্ষনে জবাব দিল “তুমি যখন আমার পাশে বসে
আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দাও, তখন।”
মুহিত একটু লজ্জা পেল। খানিক ক্ষন চুপ থেকে বলল, “আজকের
আবহাওয়াটা বেশ সুন্দর। আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। তার মাঝে দূর আকাশে বিদ্যুৎ এক লাইন
চমক দিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে। চারদিকটা ক্রমে অন্ধকার হয়ে প্রদীপের আলোর
ন্যায় নিভো নিভো হচ্ছে। দিন যেন খুব অভিমান নিয়ে রাতে গড়াচ্ছে। কি সুন্দর! দিনের
বেলায় রাতের হানা। সত্যি দিনের বেলায় রাতের একটু আবেশ পেলে কেন জানি অন্তকর্ন জেগে
উঠে। কি চমকপ্রদ! তাই না?”
ফখরুল মুগ্ধ হয়ে শুনছিল আর ভাবছিল, “এমন মানুষের
সাথে যদি অনন্ত জীবন কাটিয়ে দেওয়া যেত, তাহলে জীবনে অপূর্নতা বলে কিছু থাকত না।”
ফখরুল মুহিতের কোমল-মলিন চেহাড়ার দিকে তাকিয়ে বলল, “যাবে আমার সাথে?
-কোথায়?
আমি যেখানে নিয়ে যাই।
-যাবো। কিন্তু আরেকটু পর’ই তো বৃষ্টি শুরু হবে।
দেখছ না? আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।
“এখন কি বৃষ্টি ঝরছে না? বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে না? তুমি
একটিবার তোমার অন্তকর্ন আমার বুকে রেখে দেখ। কি অঝর ধারায় সেথায় বৃষ্টি ঝরছে।
সত্যি বলতে কি, তুমি যতক্ষন আমার পাশে থাক, বৃষ্টির প্রতিটা ধারা আমার হৃদয়ে তোমার
পট এঁকে যায়, ছোঁয়ে দিয়ে যায় আমার ব্যাকুল হৃদয়ের মরুময়তা। আমার কাছে তুমি এক
অর্থে বৃষ্টির’ই সর্বনাম।”
-আর ন্যাকামি করতে হবে না। চল যাই। বৃষ্টিতে ভিজে
আজকে কাক ভেজা হব। তারপর বৃষ্টির ক্লান্তি নিয়ে তোমার বুকে আমি ঘুমিয়ে পড়ব।
দুজন হাঁটি হাঁটি পা পা করে রাত্রিময়ী দিনে
আঁকা-বাকা পথ ধরে বনের একটি খোলা জায়গায় এসে উপস্থিত হল। জায়গাটা বেশ সুন্দর।
চারদিক বেষ্টিত সরলাকৃতির বৃক্ষ। যেন মহারাজার হুকুম তোয়াজ করছে। বৃক্ষগুলো বৃষ্টি
ও বাতাসের ঝাপটায় খুব আবেদনময়ী ভঙ্গিতে দুলছে। বেশ লাগছিল- তাদের দেখতে।
এভাবে দুজন দুজনার হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজে আচ্ছাদিত
হচ্ছে, কখনো বা আশির দশকের বাংলা চলচিত্রের কিছু অংশের হালাল চিত্রায়ন করছে। যদিও
একাজে তারা বরাবরই অপটু। তবুও চেষ্টা থেমে নেই- অবিকল চিত্রায়নের নেশায় তারা বুঁদ
হয়ে আছে। কারন এই বৃষ্টি, এই বন, জীবন রেখাকে আর ছোঁয়ে নাও যেতে পারে। তাই যথা
সময়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য ও রস আস্বাদন করে নিতে হয়। না হলে তা পানসে হয়ে যায়।
যৌবনের ভরা মৌসুমে তারা দুজন অবিরাম নেচেই চলছে। আর
তাদের বেষ্টিত করে রাখা সরালাকৃতির বৃক্ষরাজি হাঁ করে মত্ত হয়ে তাদের ছন্দহীন
নৃত্য দেখছে। সাথে মেঘলা আকাশের কাঙ্ক্ষিত ভিজুয়াল ইফেক্ট(বিজলী আলো) এসে যোগ
হয়েছে। নাচের জোয়ার এখন আর ধরে রাখে কে? পশ্চিমা দেশি-বিদেশি-হুগলী-গুগলি স্টাইলে
নাচতে নাচতে তারা এক সময় ভাবল- আরে, আমরা’ত বৃষ্টির সাথে নাচের কম্বিনেশনটাই রক্ষা
করতে পারছি না। তাই তারা স্থির করল- ফখরুল মুহিতের হাত ধরে রাখবে আর মুহিত আকাশ
পানে চেয়ে ঘুরে ঘুরে নাচতে থাকবে, এক পর্যায় ফখরুল মুহিতের হাত ছেড়ে দিবে কিন্তু
মুহিত নাচতেই থাকবে তখন ফখরুল অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আলাদা একটা ফ্লেভার সৃষ্টি করবে।
যেমন কথা তেমন কাজ। ফখরুলের হাত ধরে মুহিত ফিল্ম স্টাইলে সাত পাকে ঘুরতে শুরু করে।
এক পর্যায় ফখরুল হাত ছেড়ে দিলে মুহিত কোমর দুলিয়ে নাচতে নাচতে একটু দূরে সরে গেল।
তারপরই ঘটে অবিশ্বাস্য এক ঘটনা; যেটা কিনা ফখরুল কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারল না।
একটা অসাধারন প্রাকৃতিক ভিজুয়াল ইফেক্টের পর আরেকটি অনাকাঙ্ক্ষিত বজ্রপাত মুহিতের
গাঁয়ে আছড়ে পড়ে। ফখরুল জ্ঞান হারায়। ভিজা জামা গাঁয়ে পড়ে রয় শূন্য মাঠে খোলা
আকাশের নিচে। সে কি ব্যথা। সে কি অবসাদ।
দীর্ঘ দিনের স্পেশাল অনুসন্ধান অভিযানের পর 'অপারেশন
রেসকিউ টিম' বন থেকে তাদের উদ্ধার করে। পরে সংবাদ সম্মেলনে তাদের রসায়ন নিয়ে সাংবাদিকদের
নানান উদ্ভট প্রশ্নে ফখরুল বলে, “জানের উপর দিয়া আইছিল, মালের উপর দিয়া গেছেগা। বড়
একটা ফাড়ার থেকে বাঁচলাম।”
অসম দৃষ্টিতে নিস্তব্ধ পৃথিবী খন্ড চাঁদের স্নিগ্ধতায় শিহরিত হয় না আজন্ম ক্রীতদাস ভেবে উজার করে দেয় না তার প্রশস্ত বক্ষ শুধু কান...
অসমতা
অসম দৃষ্টিতে নিস্তব্ধ
পৃথিবী
খন্ড চাঁদের স্নিগ্ধতায়
শিহরিত হয় না
আজন্ম ক্রীতদাস ভেবে
উজার করে দেয় না তার
প্রশস্ত বক্ষ
শুধু কান্নার রোলে সৃষ্টি
করে প্লাবন
আর মহামারীতে মরে বহু
মহীয়ান মনিষী
তবুও পৃথিবী অভিমানহীন
বাঁচিয়ে রাখতে পারে না
তার সূর্য সন্তানদের
দুকে দুকে মৃত্যুর স্বাদ
আস্বাদন করে এক একটি বর্নহীন দেহ
লাগামহীন অসমতার
আর্শিবাদে
স্ব স্ব স্থানে প্রতিষ্ঠা
পায় বীভৎস ধ্বংস
আর ধ্বংস থেকে সৃষ্টি হওয়ার
পাঁয়তারা
সৃজনশীল উদ্যমীকে দাঁড়
করিয়ে দেয়
ইতিহাসের গিলোটিনের
সম্মুখে।
আজ আর কবিতায় গাঁ শিউরিয়ে উঠে না ঘর্মাক্ত হয় না শরীর; নিস্তব্ধ বাক্যে বন্ধ হয় না শিরা-উপশিরা। হৃদ স্পন্দন দম আটকে করে না বেঁচে থাক...
কবিতার ভৎসনা
আজ আর কবিতায় গাঁ শিউরিয়ে উঠে না
ঘর্মাক্ত হয় না শরীর; নিস্তব্ধ বাক্যে বন্ধ হয় না
শিরা-উপশিরা।
হৃদ স্পন্দন দম আটকে করে না বেঁচে থাকার আহাজারি।
আজ কবিতায় সমস্ত গ্লানি
আজ কবিতায় নেই বর্ষার পলি।
আজ কবিতায় শুধু বৈরি আবহাওয়া
আজ কবিতায় বিষপানে হয়েছে মৃত্যু- যত চাওয়া।
আজ আর কবিতায় বের হয়ে আসে না
গলা কাঁপিয়ে গড় গড় শব্দে অখ্যাত শব্দ সমষ্টি
আজ কবিতা বড় অবহেলায় আপন চোয়ালে চেপে দিয়েছে অন্ধের যষ্টি।
আজ আর কবিতায় ছলছল জলে ভাসে না দু’নয়ন
আজ আর কবিতায় চাঁদের গাঁয়ে হাত বুলিয়ে ডাকা হয় না;
মায়ের মতো শয়ন।
মায়ের মতো শয়ন।
আজ আর কবিতায় চিতার আগুনে পুড়ে দাঁড়িয়ে যায় না জীবন্ত আত্না
আজ কবিতা বড় অযত্নে কবিতাকে করেছে হত্যা।
আজ আর কবিতায় গাঁ শিউরিয়ে উঠে না
ঘর্মাক্ত হয় না শরীর; নিস্তব্ধ বাক্যে বন্ধ হয় না
শিরা-উপশিরা।
হৃদ স্পন্দন দম আটকে করে না বেঁচে থাকার আহাজারি।
কোষ-কলা-টিস্যুতে লজ্জায় ধরে না পচন
আজ কবিতা অন্ধ করে না; বলিতে আকুল ভালবাসার
ব্যাকুল ধ্বনির বচন।
আজ কবিতায় নেই অবিরত মাঠের শূন্য সুর
আজ কবিতায় কাছে আসে না; দূর দিগন্তের বহু দূর।
আজ কবিতায় নেই; আপনকে আপন করে পাওয়ার চাওয়া
আজ কবিতায় ভালোবাসা অশুভ শক্তির হাত ধরে পালিয়ে হয়েছে হাওয়া।
আজ কবিতায় শুধু কুৎসা-তামাশা-ভয়
আজ কবিতায় বিজয় ভুলে গিয়ে; জয় হয়েছে পরাজায়।
অসহায়ত্ব আমাকে তুচ্ছ ভেবে বারবার দূরে ঠেলে দেওয়া হয় তারপরও যখন আমি এক ’ পা-দু ’ পা করে পদক্ষেপ নেই বিকট শব্দে আমাকে স্তম্ভিত করে ...
অসহায়ত্ব
অসহায়ত্ব
আমাকে তুচ্ছ ভেবে বারবার
দূরে ঠেলে দেওয়া হয়
তারপরও যখন আমি এক’পা-দু’পা করে পদক্ষেপ নেই
বিকট শব্দে আমাকে স্তম্ভিত
করে
মনে প্রবল ভয়ের চাপ সৃষ্টি
করে
যেন আমি চতুষ্পদ প্রাণীর
মতো জীবন যাপন করি
আমার স্বকীয়তা কেড়ে নেয়া
হয়
আমাকে অবমূল্যায়ন করা হয়
গুটিসুটি হয়ে চুপটি মেরে
রঙিন পৃথিবী দেখা থেকে
বিরত থাকতে বলা হয়
তবুও আমার জীর্ন
মন-প্রাচীর ভেদ করে
প্রায়ই স্বপ্ন-আলো দলবেঁধে
আসে
আমাকে টেনে তোলে- তাদের
সাথে খানিক কদম
হাঁটতে শেখায়;
আমিও মনের অগোচরে হেঁটে
চলি।
তারপর’ই আমার ভয় হয়
বিকট শব্দে লাঞ্ছিত হবার,
কখন এসে আমাকে যে রক্তাত্ত
করে দেয়
ব্যাথার আহাজারিতে শুষ্ক
রসবোধের সূচনা করে
তারপরও আমি প্রকৃতি পানে
চেয়ে থাকি
অদৃশ্য হাতের স্নেহ পেয়ে
আবার যখন ছলছল চোখে
হাটুর ভাঁজ ভেঙ্গে
দাঁড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করি
তখন কেউ পাশে থাকে না আমার
তিল পরিমাণ জায়গা থাকে না
কারো হৃদয়ে
আমার জন্য “আহ্” শব্দ বলার
বরং নিছক আর জঞ্জাল বাক্য
গোষ্ঠী দ্বারা আমাকে
তিরস্কার করা হয়
আমার জন্ম নিয়ে প্রশ্ন
তোলা হয়
আমার মায়ের ভৎসর্না করা হয়
এসব শুনে প্রায়শ আমার
কুষ্ঠকাঠিন্য দেহে
জ্বালাময়ী অশান্তি সৃষ্টি
হয়
তীব্র ক্ষোভ জন্ম নেয় একের
পর এক
মনে হয়- ঐ মুখগুলোকে ছেঁচে
ভীবৎস করে দেই
তা সম্ভবপর হয়ে উঠে না
ঘন নিঃশ্বাসের সাথে সমস্ত
বিষাদ আর গ্লানি
বাতাসে মিশে
আমাকে নোংরা-কুৎসিত-অসভ্য
বলে গালমন্দ করে
ক্ষুধায় কাতরিয়ে উপর হয়ে
শুয়ে থাকা- এই আমাকে
লাঠিঘাত করে বিতাড়িত করে
কখনো বা শক্ত হাত মুঠিয়ে
আমার কংকাল
দেহে কষাঘাত করে
তখন অসহ্য বেদনা অনুভব করি
মুখাপেক্ষী হয়ে থাকি একজন
মমতাময়ীর
যে আমাকে কিঞ্চিৎ মমতা
দিয়ে একটি
আলোকিত জানালার অভিমুখে
ঠেলে দিবে
অথবা একটি পাল তোলা নৌকায়
তুলে
মুক্তির অবতারণা করবে
কিন্তু এমন কারোর সন্ধান’তো জন্ম অবধি আজ
পর্যন্ত মেলে নি
জন্মান্ধ এই চোখগুলো কেবল
পাশবিকতা
আর নৃশংসতার করুণ সাক্ষী
আমি কখনো রঙিন সুতোয় আঙুল
পেঁচিয়ে খেলা করতে শিখি নি
আমাকে বারবার ঠেলে পাঠানো
হয়েছে
নিন্দনীয়-অসোভন-অশ্লীল শত
কাজে
মোমের পুতুল বানিয়ে
আলো-আধারে
রেখেছে সহস্র বছর;
তারপরও আমি এখন যুবক।
পারিপার্শ্বিকতার যাঁতাকলে
পৃষ্ঠ
জীবন সংগ্রামী
নওজোয়ান সাজবার সাধ নেই
আমার।।
প্রেতাত্মা নাম শুনিলেই অনেকের ’ ই গাঁ ছমছম করিয়া বা শিউরিয়া উঠে। অনেকে আবার প্রেতাত্মার দর্শন লাভের জন্য মরিয়া হইয়া থাকে যে কখন তাহা...
প্রেতাত্মা ও অন্যান্য
প্রেতাত্মা নাম শুনিলেই অনেকের’ই গাঁ ছমছম করিয়া বা শিউরিয়া উঠে। অনেকে আবার
প্রেতাত্মার দর্শন লাভের জন্য মরিয়া হইয়া থাকে যে কখন তাহাদের দেখিয়া চোখের সাধ
নিবারন করিবে। যাহারা এরকম মরিয়া হইয়া থাকে তাহাদের কাছে প্রেতাত্মা আসিয়া ধরা
দিতে বাধ্য থাকে না। তাহাদের প্রেতাত্মা সাক্ষাৎ এর লালসা, বাসনা হইয়া
স্তুপকৃত পড়িয়া রহে। আর যাহারা প্রেতাত্মার নাম শুনিলে’ই ভুত-ভবিষ্যৎ
এর তালগোল পাকাইয়া ফেলে, প্রেতাত্মা বেছে বেছে তাহাদের নিকট’ই আসিয়া ভিড়ে
করে। কারন তাহাদের লক্ষ্য হল ভীরুদের বারবার পরাজিত করিয়া তাহাদের ঘাড়ে চাপিয়া
বসিয়া সমস্ত রক্ত সযত্নে আস্বাধন করা। কারন ভীরুদের রক্তে নাকি প্রেতাত্মা সমাজ
আলাদা একটি ফ্লেবার পাইয়া থাকে। তাই কালের বিস্তারে ভীরুদের সাথে প্রেতাত্মা
সমাজের একটি নিবিড় সম্পর্ক গড়িয়া উঠিয়াছে।কিন্তু সাহসীদের সাথে তাহারা সাহস করিয়া
সেই সম্পর্ক গড়িয়া তুলিতে পারে নাই। কারন সাহসীদের পরাজিত করা তত সহজ কাজ নয়; তাহাদের
মনোবলের সম্মুখে দাঁড়ালে ভূত সমাজ নিজদের ‘ফুত’ ভাবিয়া একে অপরের জাত নিয়া প্রশ্ন তুলিতে
পারে। অমনকি বিজাতি-জারক শব্দগুচ্ছ দিয়া একে অপরকে গাল-মন্দ করিতে পারে। কপাল লিখন
দ্বারা যদি সাহসীরা পরাজিতও হয় তাহলে কেবল একবার’ই হয়। তাই সাহসীদের মুখোমুখী হতে হলে
প্রেতাত্মাকে জীবন শঙ্কা নিয়া আসিতে হয় এবং জীবন প্রদীপ নিভিয়া যাওয়ার আশঙ্কা থাকে
দুর্নিবার। কাপুরুষ-ভীরুদের দিয়া প্রেতাত্মা তাহাদের দৈবিক এ্যানটারটেইনম্যান্ট
নিয়া বছর জুড়িয়া মজুদ রাখে। যাহা কিনা তাহারা লংড্রাইব বা সিজনাল বিভিন্ন ট্রিপে
কাজে লাগাইয়া খুশি থাকে। ভীরুর দল এসব কিছুতেই বুঝতে’ই পারে না।
ঠিক এ কারনেই প্রেতাত্মা দর্শনে মনের স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ফিরে ফিরে
তারা প্রেতাত্মার নিকটাপন্ন হয় কিংবা প্রেতাত্মা তাদের নিকটাপন্ন হয়।
প্রেতাত্মা দর্শনপ্রিয় মানুষ সেই অশরীরী ছায়াকে দেখিবার পর উহাকে ভূত বলিয়া
সম্বোধন করিয়া থাকে। ভূতের রসাতলে যাহারা এ যাবৎ পা পর্যন্ত রাখেনি, তাহাদের কাছে
ভূতের গপ্প অদ্ভুত মনে হইবে।কারন ন্যাড়া তো এখন পর্যন্ত বেলতলায় যায়নি। সে আর
বুঝিবে কেমনে; তাহারা কতই না দুধর্ষ আর ভয়ংকর। প্রেতাত্মা
বা ভূতের কারসাজি সকলেরই কম-বেশি জানা রহিয়াছে। কেউ স্বচুক্ষে দেখিয়া জানিয়াছে, কেউ বা আবার
দাদা-দাদির মুখ থেকে শুনিয়া জানিয়াছে। ভুত সমাজ মানুষকে একদমই মানুষ মনে করে না।
মানুষ নিয়া পুতুল খেলা খেলিয়া তাহারা আনন্দ লাভ করিয়া থাকে। এই ভূত সমাজ যখনি কোন
মানুষের হৃদয়ে তাহার প্রতি তীব্র ভালবাসর আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে, মানব সমাজ তা
সর্বসাকুল্ল্যে মানিয়া লইতে পারে না। তখনি ঘটে বিপত্তি। তাহারা মানব সমাজের প্রতি
খেপিয়া উঠে, রাগ-গোস্বা উপর্যপরি ক্রমশ বৃদ্ধি পাইতে
থাকে। যার ধরুন তাহারা তাহাদের ঝাল মিটানোর জন্য মানুষের আরও বেশি কাছে আসিয়া, ঘাড়ে চাপিয়া
বসে।তখন আমরা সামগ্রিক বিষয়টিকে সংজ্ঞায়ন করিয়া থাকি জ্বীনের আছড়
বলিয়া।ওঝা-ফকির-হেকিম-দরবেশ-মৌলবী সাহেবের কদর ও ব্যবসা তখন রমরমা। আসলে তাহদের
দাওয়া-পানি-তদবিরে কিছুটা সুস্থতার সন্ধান পাওয়া যায় বটে। তারা যে একবারে কিছু
জানে না; এটা ভুল।তবে তারা বিজ্ঞনসম্মত উপায়ে তাদের
এক্সপিরিমেন্ট চালায় না বলিয়া তাহারা সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত হয়ে উঠিতে পারে না।তাই
তাহাদের সিজনাল ব্যবসায়ের দিকে মুখাপেক্ষী হয়ে থাকিতে হয়। তাহাদের এই কাজে যথেষ্ট
ঝুঁকি রহিয়াছে। তবে তারা জ্বীনের সাইকোলজিটা ভালোভাবে রপ্ত করে লয়; এই কার্যে
পারদর্শিতা প্রমান করার পূর্বে।
আসল কথায় আসা যাক। প্রেতাত্মা-ভূত-জ্বীন তাহারা স্বজাতি; একই কিছিমের।
তাহাদের নিয়া আমাদের মতো দুর্বল শ্রেণীর মতভেদ না থাকাই উত্তম। বলা তো যায় না; কখন কার
মতামতের ধরুন তাদের সূক্ষ্ম অনুভুতিতে তীব্র আঘাতের সৃষ্ট হইতে পারে। তাই তাহাদের
থেকে ১০০ হাত দূরে থাকা আমাদের জন্য অনেকটা আরাম কেদারায় গাঁ লাগিয়ে ঝিমিয়ে পুরো
জিন্দিগি পার করিয়া দেওয়ার মতো।তাহাদের কাছ থেকে তো নির্দিষ্ট দূরুত্ব নিয়া সরিয়া
আসা হইল। কিন্তু যে অশরীরী ছায়া আপনি আপনার সাথে নিয়া ঘুরে বেড়াইয়া চলিয়াছেন।
তাহাকে সরাবেন কি করিয়া, তাহাকে তো আপনি প্রশয় দিয়া আপনার সঙ্গী
বানাইয়া রাখিয়াছেন। আপনাকে স্পষ্ট মনে করাইয়া দেই- অন্ধকারে যে অশরীরী ছায়া দেখিতে
পাওয়া যায়; তা’ই যে শুধু প্রেতাত্মা; এমনটি
নয়।আপনার মাঝে আপনার অগোচরে আপনারই দেহে বাসা বাঁধিতে পারে অশরীরী ছায়া।সেটাও এক
ধরনের প্রেতাত্মা। যেটা কিনা অন্ধকারে দেখা প্রেতাত্মার চেয়ে আরও বেশি ভয়ংকর।এই
প্রেতাত্মাকে ফকির-ওঝা-দরবেশ কেউ চিনিতে পারে না; এমনকি তাহাদের ঝাড়ফুঁকও ঐ সময়ে কাজ করিতে
সামর্থ্যবান হইয়া উঠে না। যাহার দেহে বাসা বাঁধে কেবল সে’ই চিনতে পারে
এবং তার প্রতিরক্ষা বিধান করিতে পারে।
মনের সব অগোছালো অপ্রীতিকর রুচি-অভ্যাস-কাম-বাসনা-চেতনা ইত্যাদি মানবের দেহে
বাসা বাঁধা প্রেতাত্মা তথা অশরীরী ছায়া। অসৎ সঙ্গও এর আওতাভুক্ত। যার সুস্পষ্ট
প্রমান মিলে কদিন আগের জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত উত্তরার কিশোর গ্যাংস্টারদের
ক্রিয়াকলাপ ও আদানান কবিরের মৃত্যু দ্বারা। এসব ঘটনা সৃষ্টির জন্য দায়ী সামাজিক
কাঠামো ব্যবস্থার কঠোর অনুশাসনহীনতা এবং পরিবারের ভূমিকা ও সচেতনতার অপরিপক্কতা।
সমাজ-পরিবার এগুলো আলাদা কিছু নহে। যখন পরিবার কিংবা সমাজ’ই অশরীরী
ছায়ার অগ্রাসনে অসহায়,তখন নির্দিধায় বলিতে পারা যায়, জনসংখ্যা
বিস্ফোরণের মতো প্রেতাত্মা বিস্ফোরণ অনিবার্য। এই প্রেক্ষাপটে সৈয়দ মুজতবা আলীর
একটি উক্তি মনে পড়িয়া গেল; কুহিনিন যদি রোগ সারায় তাহলে কুহিনিন সারাবে
কে? অপসংস্কৃতি চর্চা, ইসলামিক
অনুশাসন থেকে পিছু হটা, কুশিক্ষা গ্রহন ও দুর্বল-হীন চেতনা লালন
ইত্যাদি অশরীরী ছায়া সৃষ্টির প্রধান নিয়ামক বা উপকরণ।এসব নিয়ামকগুলো অন্তর গহিনে
লালন করে সমাজ বিনির্মানের স্বপ্ন দেখি আমরা। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে প্রতিবন্ধী-অন্ধ
শিশু ধর্ষনের মধ্য দিয়ে। হায়রে মন-জঞ্জাল তুই’তো সমাজ থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে সমাজে তা প্রয়োগ
করিয়া চলিয়াছিস। তুই কি ভেবে দেখিয়াছিস- যে সমাজে তুই বর্বরতা চালিয়ে বেড়ায়তাছিস
সে সমাজে তোর’ই রক্ত শরীরে নিয়া দিনপাত করিতেছে তোর ভাই, তোর’ই বোন এবং তোর
স্পন্দন।তাই তোর কি উচিত নয়; মনের সকল তুচ্ছতা জলাঞ্জলি দিয়ে, হীন বন্ধুরুপী
প্রেতাত্মাকে অন্তরের যাঁতাকলে পৃষ্টে মেরে পৃথিবীর একাংশ আপন করে নেওয়া।
তোর ইচ্ছা মুষল ধারে বহিয়া যাক।
আর না- আজকের মতো এখানে’ই থাক।
বিদায়।
Subscribe to:
Comments (Atom)
0 comments: