প্রেতাত্মা নাম শুনিলেই অনেকের’ই গাঁ ছমছম করিয়া বা শিউরিয়া উঠে। অনেকে আবার
প্রেতাত্মার দর্শন লাভের জন্য মরিয়া হইয়া থাকে যে কখন তাহাদের দেখিয়া চোখের সাধ
নিবারন করিবে। যাহারা এরকম মরিয়া হইয়া থাকে তাহাদের কাছে প্রেতাত্মা আসিয়া ধরা
দিতে বাধ্য থাকে না। তাহাদের প্রেতাত্মা সাক্ষাৎ এর লালসা, বাসনা হইয়া
স্তুপকৃত পড়িয়া রহে। আর যাহারা প্রেতাত্মার নাম শুনিলে’ই ভুত-ভবিষ্যৎ
এর তালগোল পাকাইয়া ফেলে, প্রেতাত্মা বেছে বেছে তাহাদের নিকট’ই আসিয়া ভিড়ে
করে। কারন তাহাদের লক্ষ্য হল ভীরুদের বারবার পরাজিত করিয়া তাহাদের ঘাড়ে চাপিয়া
বসিয়া সমস্ত রক্ত সযত্নে আস্বাধন করা। কারন ভীরুদের রক্তে নাকি প্রেতাত্মা সমাজ
আলাদা একটি ফ্লেবার পাইয়া থাকে। তাই কালের বিস্তারে ভীরুদের সাথে প্রেতাত্মা
সমাজের একটি নিবিড় সম্পর্ক গড়িয়া উঠিয়াছে।কিন্তু সাহসীদের সাথে তাহারা সাহস করিয়া
সেই সম্পর্ক গড়িয়া তুলিতে পারে নাই। কারন সাহসীদের পরাজিত করা তত সহজ কাজ নয়; তাহাদের
মনোবলের সম্মুখে দাঁড়ালে ভূত সমাজ নিজদের ‘ফুত’ ভাবিয়া একে অপরের জাত নিয়া প্রশ্ন তুলিতে
পারে। অমনকি বিজাতি-জারক শব্দগুচ্ছ দিয়া একে অপরকে গাল-মন্দ করিতে পারে। কপাল লিখন
দ্বারা যদি সাহসীরা পরাজিতও হয় তাহলে কেবল একবার’ই হয়। তাই সাহসীদের মুখোমুখী হতে হলে
প্রেতাত্মাকে জীবন শঙ্কা নিয়া আসিতে হয় এবং জীবন প্রদীপ নিভিয়া যাওয়ার আশঙ্কা থাকে
দুর্নিবার। কাপুরুষ-ভীরুদের দিয়া প্রেতাত্মা তাহাদের দৈবিক এ্যানটারটেইনম্যান্ট
নিয়া বছর জুড়িয়া মজুদ রাখে। যাহা কিনা তাহারা লংড্রাইব বা সিজনাল বিভিন্ন ট্রিপে
কাজে লাগাইয়া খুশি থাকে। ভীরুর দল এসব কিছুতেই বুঝতে’ই পারে না।
ঠিক এ কারনেই প্রেতাত্মা দর্শনে মনের স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ফিরে ফিরে
তারা প্রেতাত্মার নিকটাপন্ন হয় কিংবা প্রেতাত্মা তাদের নিকটাপন্ন হয়।
প্রেতাত্মা দর্শনপ্রিয় মানুষ সেই অশরীরী ছায়াকে দেখিবার পর উহাকে ভূত বলিয়া
সম্বোধন করিয়া থাকে। ভূতের রসাতলে যাহারা এ যাবৎ পা পর্যন্ত রাখেনি, তাহাদের কাছে
ভূতের গপ্প অদ্ভুত মনে হইবে।কারন ন্যাড়া তো এখন পর্যন্ত বেলতলায় যায়নি। সে আর
বুঝিবে কেমনে; তাহারা কতই না দুধর্ষ আর ভয়ংকর। প্রেতাত্মা
বা ভূতের কারসাজি সকলেরই কম-বেশি জানা রহিয়াছে। কেউ স্বচুক্ষে দেখিয়া জানিয়াছে, কেউ বা আবার
দাদা-দাদির মুখ থেকে শুনিয়া জানিয়াছে। ভুত সমাজ মানুষকে একদমই মানুষ মনে করে না।
মানুষ নিয়া পুতুল খেলা খেলিয়া তাহারা আনন্দ লাভ করিয়া থাকে। এই ভূত সমাজ যখনি কোন
মানুষের হৃদয়ে তাহার প্রতি তীব্র ভালবাসর আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে, মানব সমাজ তা
সর্বসাকুল্ল্যে মানিয়া লইতে পারে না। তখনি ঘটে বিপত্তি। তাহারা মানব সমাজের প্রতি
খেপিয়া উঠে, রাগ-গোস্বা উপর্যপরি ক্রমশ বৃদ্ধি পাইতে
থাকে। যার ধরুন তাহারা তাহাদের ঝাল মিটানোর জন্য মানুষের আরও বেশি কাছে আসিয়া, ঘাড়ে চাপিয়া
বসে।তখন আমরা সামগ্রিক বিষয়টিকে সংজ্ঞায়ন করিয়া থাকি জ্বীনের আছড়
বলিয়া।ওঝা-ফকির-হেকিম-দরবেশ-মৌলবী সাহেবের কদর ও ব্যবসা তখন রমরমা। আসলে তাহদের
দাওয়া-পানি-তদবিরে কিছুটা সুস্থতার সন্ধান পাওয়া যায় বটে। তারা যে একবারে কিছু
জানে না; এটা ভুল।তবে তারা বিজ্ঞনসম্মত উপায়ে তাদের
এক্সপিরিমেন্ট চালায় না বলিয়া তাহারা সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত হয়ে উঠিতে পারে না।তাই
তাহাদের সিজনাল ব্যবসায়ের দিকে মুখাপেক্ষী হয়ে থাকিতে হয়। তাহাদের এই কাজে যথেষ্ট
ঝুঁকি রহিয়াছে। তবে তারা জ্বীনের সাইকোলজিটা ভালোভাবে রপ্ত করে লয়; এই কার্যে
পারদর্শিতা প্রমান করার পূর্বে।
আসল কথায় আসা যাক। প্রেতাত্মা-ভূত-জ্বীন তাহারা স্বজাতি; একই কিছিমের।
তাহাদের নিয়া আমাদের মতো দুর্বল শ্রেণীর মতভেদ না থাকাই উত্তম। বলা তো যায় না; কখন কার
মতামতের ধরুন তাদের সূক্ষ্ম অনুভুতিতে তীব্র আঘাতের সৃষ্ট হইতে পারে। তাই তাহাদের
থেকে ১০০ হাত দূরে থাকা আমাদের জন্য অনেকটা আরাম কেদারায় গাঁ লাগিয়ে ঝিমিয়ে পুরো
জিন্দিগি পার করিয়া দেওয়ার মতো।তাহাদের কাছ থেকে তো নির্দিষ্ট দূরুত্ব নিয়া সরিয়া
আসা হইল। কিন্তু যে অশরীরী ছায়া আপনি আপনার সাথে নিয়া ঘুরে বেড়াইয়া চলিয়াছেন।
তাহাকে সরাবেন কি করিয়া, তাহাকে তো আপনি প্রশয় দিয়া আপনার সঙ্গী
বানাইয়া রাখিয়াছেন। আপনাকে স্পষ্ট মনে করাইয়া দেই- অন্ধকারে যে অশরীরী ছায়া দেখিতে
পাওয়া যায়; তা’ই যে শুধু প্রেতাত্মা; এমনটি
নয়।আপনার মাঝে আপনার অগোচরে আপনারই দেহে বাসা বাঁধিতে পারে অশরীরী ছায়া।সেটাও এক
ধরনের প্রেতাত্মা। যেটা কিনা অন্ধকারে দেখা প্রেতাত্মার চেয়ে আরও বেশি ভয়ংকর।এই
প্রেতাত্মাকে ফকির-ওঝা-দরবেশ কেউ চিনিতে পারে না; এমনকি তাহাদের ঝাড়ফুঁকও ঐ সময়ে কাজ করিতে
সামর্থ্যবান হইয়া উঠে না। যাহার দেহে বাসা বাঁধে কেবল সে’ই চিনতে পারে
এবং তার প্রতিরক্ষা বিধান করিতে পারে।
মনের সব অগোছালো অপ্রীতিকর রুচি-অভ্যাস-কাম-বাসনা-চেতনা ইত্যাদি মানবের দেহে
বাসা বাঁধা প্রেতাত্মা তথা অশরীরী ছায়া। অসৎ সঙ্গও এর আওতাভুক্ত। যার সুস্পষ্ট
প্রমান মিলে কদিন আগের জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত উত্তরার কিশোর গ্যাংস্টারদের
ক্রিয়াকলাপ ও আদানান কবিরের মৃত্যু দ্বারা। এসব ঘটনা সৃষ্টির জন্য দায়ী সামাজিক
কাঠামো ব্যবস্থার কঠোর অনুশাসনহীনতা এবং পরিবারের ভূমিকা ও সচেতনতার অপরিপক্কতা।
সমাজ-পরিবার এগুলো আলাদা কিছু নহে। যখন পরিবার কিংবা সমাজ’ই অশরীরী
ছায়ার অগ্রাসনে অসহায়,তখন নির্দিধায় বলিতে পারা যায়, জনসংখ্যা
বিস্ফোরণের মতো প্রেতাত্মা বিস্ফোরণ অনিবার্য। এই প্রেক্ষাপটে সৈয়দ মুজতবা আলীর
একটি উক্তি মনে পড়িয়া গেল; কুহিনিন যদি রোগ সারায় তাহলে কুহিনিন সারাবে
কে? অপসংস্কৃতি চর্চা, ইসলামিক
অনুশাসন থেকে পিছু হটা, কুশিক্ষা গ্রহন ও দুর্বল-হীন চেতনা লালন
ইত্যাদি অশরীরী ছায়া সৃষ্টির প্রধান নিয়ামক বা উপকরণ।এসব নিয়ামকগুলো অন্তর গহিনে
লালন করে সমাজ বিনির্মানের স্বপ্ন দেখি আমরা। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে প্রতিবন্ধী-অন্ধ
শিশু ধর্ষনের মধ্য দিয়ে। হায়রে মন-জঞ্জাল তুই’তো সমাজ থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে সমাজে তা প্রয়োগ
করিয়া চলিয়াছিস। তুই কি ভেবে দেখিয়াছিস- যে সমাজে তুই বর্বরতা চালিয়ে বেড়ায়তাছিস
সে সমাজে তোর’ই রক্ত শরীরে নিয়া দিনপাত করিতেছে তোর ভাই, তোর’ই বোন এবং তোর
স্পন্দন।তাই তোর কি উচিত নয়; মনের সকল তুচ্ছতা জলাঞ্জলি দিয়ে, হীন বন্ধুরুপী
প্রেতাত্মাকে অন্তরের যাঁতাকলে পৃষ্টে মেরে পৃথিবীর একাংশ আপন করে নেওয়া।
তোর ইচ্ছা মুষল ধারে বহিয়া যাক।
আর না- আজকের মতো এখানে’ই থাক।
বিদায়।
0 comments: