recent

একটি ছাতার জবানবন্দী আমি একটি ছাতা। রোদে পুড়িয়ে, বৃষ্টিয়ে ভিজিয়ে কি’ই বা দিয়েছে আমাকে মানুষ! কি’ই বা পেয়েছি আমি! পেয়েছ...

একটি ছাতার জবানবন্দী


একটি ছাতার জবানবন্দী

আমি একটি ছাতা।
রোদে পুড়িয়ে, বৃষ্টিয়ে ভিজিয়ে
কি’ই বা দিয়েছে আমাকে মানুষ!
কি’ই বা পেয়েছি আমি!
পেয়েছি কি কখনো প্রেম, ভালোবাসা?

অথচ-
এ প্রেমের সূচনা হয়েছে আমার আঙ্গিনায়,
এ ভালোবাসার আবির্ভাব ঘটেছে আমার স্পর্শে,
তবে কেন আমি প্রেম থেকে বঞ্চিত?
তবে কেন আমি ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত?
আমি কি শুধুই উন্মোচিত হয়ে অবিরাম দিয়েই যাব?
আমার কি পাওয়ার কিছু নেই
আমার কি প্রাপ্তির খাতা শূন্য থাকবে?
মানুষ হতে পারি না বলে-
একটু স্নেহ- একটু মায়া- একটু করুণা
আমার জন্য কি অবশিষ্ট রবে না?

কি না দিয়েছি আমি মানুষকে-
সর্গীয় অনুভূতি কি পায়নি আমার আড়ালে?
দেইনি কি-
সমস্ত তাপ শুষে একটু ছায়া-একটু শীতলতা
বেঁচে থাকার অবকাশ
তবে কেন- প্রয়োজন শেষে আমাকে সংকুচিত করে আবদ্ধ অন্ধকারে রাখা হয়?
তবে কেন- প্রত্যহ আমার খোঁজ নেওয়া হয় না?
আমি কি এতটা’ই মূল্যহীন-অসুন্দর?
তাহলে এই অসুন্দরের আড়ালে কীভাবে জন্ম নেয়!
প্রেম!
ভালোবাসা!

আমি সাধ্যাতীত চেষ্টা করি- জীবন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত উন্মোচিত থেকে-
মানুষের সুখ-দুঃখের করুন সাক্ষী হয়ে থাকতে;
কিন্তু আমাকে প্রায়ই-
মানুষ হিংসার বিষ বাষ্পে ব্যবহার করে,
ছুঁড়ে ফেলে দেয় রাস্তায়
আমার অসুস্থতায় গাল-মন্দ করতে দ্বিধান্বিত হয় না কেউ
তবে কি আমি এতকাল কিছু বিকৃত মানুষের দাসত্ব করে এসেছি?
যাদের হৃদয়ে ক্রীতদাসের প্রতি ন্যূনতম মায়া ও ভালোবাসার স্থান নেই।

অথচ-
এ স্নেহেরও তো সূচনা হয়েছে আমাকে ঘিরে,
জন্মদাত্রী কি? আমাকে সন্তানের হাতে তুলে দিয়ে;
আষাঢ়ের বৃষ্টিতে ভিজে আচ্ছাদিত হয়নি?
চৌত্রের রোদে পুড়ে বিবর্ন করেনি কি তার বহিঃআবরণ?
জীবনে অসংখ্য বার জ্বরে কাঁতরিয়ে চোখ জোড়াগুলোকে কি করেনি শুষ্ক, মলিন?
তবুও আমি মধুস্বাদ সম্পর্কের সূচনা টেনেই চলেছি-
আমার নিদারুণ কষ্টগুলোকে মাটি চাপা দিয়ে।
কারন আমার আড়ালে পৃথিবীর বুকে প্রেম-ভালোবাসা-স্নেহ-মায়া নামক সূর্যাশক্তি উদিত হয়।
আমাকে ঘিরেই তাদের বিচরণ, বেড়ে উঠা, নব প্রেমের চিত্র আঁকা।
আমার নেপথ্যে তারা সুবাস ছড়ায় সুখের- আনন্দের- জীবনের
কি বিচিত্র বাঁকে তাদের আগমন- প্রতাবর্তন- ভ্রমন।
এই মধুখনে, এই মাধুর্য লগ্নে
আমি-মিশ্রিত স্মৃতি ক’জনেরই বা মনে থাকে-
কিংবা ক’জনই বা মনে রাখে-
ক’জনই বা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে

তারা কি চায় না?
আমি জীবন উৎসর্গ করি- ভালোবাসার তরে, জীবনের তরে;
আমি জানি, একদিকে মুখ ফিরালে অন্যদিক অন্ধকার হয়
কিন্তু আমার অভয়ব’তো সে রকম নয়!
আমি শাখাপ্রশাখা বিস্তৃত এক বটবৃক্ষ।
যে কিনা পথিকের চিরাচয়িত আশ্রয়- পাখির কাঙ্ক্ষিত নীড়।
পোকামাকড়ের জীবন সংসার- সওদাগরের শীতল প্রশ্বাস।
তবুও আমার প্রতি কেন এত অগভীর ভালোবাসা?
যে কিনা শুধুই পরার্থে অবিরত কাজ করে যেতে চায়
তাকে কেন- প্রয়োজন ফুরালে দূরে ঠেলে দেওয়া হয়।
তাকে কেন- খনিকের জন্য নিষ্পাপ বুকে আগলে রাখা হয় না?
জন-মানবহীন প্রান্তে কেন তাকে চাপা সুরে অশ্রু ঝরাতে হয়?
কেন তাকে- তার ভালোবাসা ফিরিয়ে দেওয়া হয় না?

সামগ্রিক দিক বিবেচনায়- আমি কি ধরেই নেব;
শতাব্ধীর সম্পর্কের ইতি এভাবেই হয়।
আমি কি ধরেই নেব;
সহস্র বছরের প্রনয় পরিণতি এভাবেই হয়।
কিন্তু আমি আমার পূর্ব-পুরূষের গল্পে’তো এরকম দেখিনি।
দেখিনি এত পরিহিংসা!
দেখিনি এত আত্নস্বার্থতা।
দেখিনি এত পরিহাস।
অন্যকে খুব সযত্নে ভুলে যাওয়ার আত্নপ্রবনতা।

আমি স্রস্টার কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছিলাম।
আমৃত্যু আমি মানুষের জীবনে মঙ্গল বয়ে আনব।
পরমানন্দময় শান্তিতে মানুষকে মাতিয়ে রাখব।
প্রতিটি মানুষের জীবন গেঁথে দেব প্রজাপতির ডানায়।
কখনো বা রঙিন সুতোয়; কখনো বা বকুলের মালায়
কিন্তু আমাকে’তো কাছেই ডাকা হয় না
ভালোবাসাই হয় না
আদর করে আমার গালে চুমো খাওয়া হয় না
আমি নাকি শুধুই মানুষের প্রয়োজন।
অথচ প্রয়োজন থেকেই’তো অনেক প্রণয়ের সৃষ্টি
তবে আমার ক্ষেত্রে সেরকম হয় না কেন
আমি’তো আজীবন ভেবে আসেছি,
জীবন মানে উৎসর্গ
জীবন মানে উদযাপন
আমি’তো জীবন উৎসর্গ করেছি ঠিকই বটে
কিন্তু আমার জীবনে উদযাপনের লেশমাত্র আনন্দ এসে ভীড় করেনি।
তবুও অন্যকে তিমির রাত্রে উত্তাল আনন্দ সমুদ্রে ভাসিয়ে রেখেছি
বেদনা মুছে দিয়ে একগুচ্ছ বর্ষাস্নাত কদম’ও হাতে তুলে দিয়েছি
হাজারো অশ্রুজল মাথায় নিয়ে ভালবাসার গান শুনিয়েছি।
 
আমি আমার জন্মকে সার্থক করতে পারিনি বটে;
তবে আমি জেনেছি-
মানুষ বড়ই স্বার্থপর
মানুষ বড়ই হীন।
মানুষ বড়ই নিষ্ঠুর
মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ




0 comments: