recent

আমার সাহিত্য ভালো লাগে না , কবিতা পড়তে বিরক্তি লাগে। উপন্যাস , ভ্রমনকাহিনী , আত্নজীবনী ; এগুলো ’ তো আরো বেশি বিরক্তিকর। ...

রুচিশৈলী


আমার সাহিত্য ভালো লাগে না, কবিতা পড়তে বিরক্তি লাগে। উপন্যাস, ভ্রমনকাহিনী, আত্নজীবনী; এগুলোতো আরো বেশি বিরক্তিকর।

আমি জারি, সারি, বাউল, ভাটিয়ালি, মুর্শিদি কবি গান শুনি না। আমি শুনি- পোপ, রক, হিপ-হপ, ফিউশন, মর্ডান গান। জারি, সারি কি আমার সাথে যায়?

আমি তিন-চার জনের সাথে অ্যাট অ্যা টাইম প্রেম করছি। কেউই এখন পর্যন্ত বুঝতে পারেনি। ডেটে যাই, চিল করি, পুরা অস্থির লাইফ।

আমি যাদের সাথে রিলেশন করি, তাদের প্রত্যেকের ফেইসবুকের পাসওয়ার্ড জানি। ব্ল্যাকমেইল করে পাসওয়ার্ড নিয়ে নিছি। কিন্তু আমার পাসওয়ার্ড কেউ জানে না। বুঝতে হবে মামা।

আমি উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত মরা ছবি দেখি না। এগুলো কি দেখার ছবি। অ্যাকশন নাই, কোনো মোশন নাই। ধুর।

আমি হলফ করে বলতে পারি, স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন সময়ে, “লাইব্রেরী কই?” তা আমি জানতাম না। লাইব্রেরীর আশেপাশে থাকা তো দূরের কথা। আর লাইব্রেরীতে গিয়ে দুমিনিট বসাতো প্রশ্নেই উঠে না।

দিন বন্ধুরা মিলে বারে গেয়েছিলাম। আনক্যান্টিমিনিটেড ওয়াটার সেবন করে তিন হাজার টাকা বিল দিয়ে আসছি। সাথে ওয়েটারে খুশি হইয়া একশ টাকা বকশিশ দিয়েছি। পিনিক কারে কয়।

গতবার লালনের আখড়ায় গিয়েছিলাম। আমার জীবনের সেরা সফর। সারা রাত বাবার আরাধনা করে, শেষ রাতে ধুঁয়ার কুণ্ডলী পাকাইছি। ঢাকা থেকে ফিল্টারসহ অন্য সব সরঞ্জামাদি ব্যবস্থা করে নিয়া গেছি। যাতে জায়গায় গিয়া ফাপরে পড়তে না হয়।

আমি পুরা উনিক। স্কুল-কলেজে কোনো ক্লাব বা সংগঠনে যোগ দেই নাই। আমার একটা স্ট্যাটাস আছে না? এগুলো করে হাবাগোবা পোলাপাইন। কাম-কাইজ নাই, হুদাই সংগঠন-সংগঠন করে।

কালকে এলাকায় গেঞ্জাম করছি। তোরাতো জানস- যেই জায়গায়ই গেঞ্জাম হউক, জায়গায়ই আমি আছি। একেবারে ফাটাইয়া দিসি।

উপরিউক্ত কথাগুলো অনেকে খুব গর্ব নিয়ে বলে। তারা মনে করে, কথায় তাদের ক্রেডিট কচি লাউয়ের ডগার মতো তরতর করে উপর্যপরি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আসলে না। তাদের এই গৌরবান্বিত ক্রেডিট উপার্জন যে কোথায় যাচ্ছে, ভূতত্ত্ববিদ ছাড়া তার হদিস মেলানো অপেক্ষাকৃত দুষ্কর।

ধরনের কথায় ব্যক্তির রুচিশৈলী ফুটে উঠে। ধরনের কথা, ব্যক্তির সৌন্দর্যেরবোধের পরিচয় বহন করে। ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের সংজ্ঞায়ন হয়।

কথা বলার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বনের ব্যাপারে প্রতিটি ধর্মেই বলা রয়েছে। কিন্তু আমরা শুনছি কই? আমরা ধর্মের পবিত্র বানীসমূহের ব্যাপারে খুব সজাগ সংবেদনশীল। বিচার-বিশ্লেষন বাদে কোনো এক বানীকে নিয়ে আমরা হুলস্থুল কান্ড বাঁধিয়ে বসি। রেষারেষি করি, বিবেদ সৃষ্টি করি। তবে জীবনে তা প্রতিফলনের অনুপাত নিতান্তই কম। আমরা সাত-পাঁচ না ভেবে অনেক কথাই বলি এসব কথার দ্বারা যে আমার ব্যক্তিতে কালো ছাপ পড়ছে, তা  আমরা উপলব্ধি করতে পারি না। পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুর তিক্ত জিনিস হচ্ছেকথা কিন্তু কথাতেই আমাদের সবচেয়ে বেশি উদাসীনতা অসচেতনতা। যদি একটু চিন্তা করি, পৃথিবীর সফল মানুষরা অন্যদের থেকে আলাদা কেন? কোন বিশিষ্টের কারনে তারা স্বতন্ত্র, বিশেষতর? তাহলে এর স্পষ্ট জবাব মিলবে, তাদের চেতনা কথা বলার শ্রেষ্ঠত্বের কারনে। তারা কথা বলার আগে কথার যথার্থতা, মর্মার্থ আধিপত্য খুব নিখুঁতভাবে যাচাই করে। তাইতো তাদের কথাই চিরঞ্জীব হয়ে থাকে, ইতিহাসে লেখা থাকে। আর আমরা সেই কথাই জীবন চলার পাথেয় হিসেবে গ্রহন করি। বিখ্যাত ব্যক্তিদের উক্তি জেনে বারবার চোখ বুলাই।

আপনার কথা দ্বারা যদি আপনারই মানোন্নয়ন না হয়, কথা বলার চাইতে জঘন্য নির্বাসন শ্রেয়। মানুষ হয়ে মানুষের মাঝে অনন্য হতে পারাই সবচেয়ে বড় অর্জন। আর এই অর্জনে আপনাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করবে কথার মাধুর্যতা, কথার বিশ্লেষণবোধ, কথার অন্তর্নিহিত তাৎপর্যতা বিবেচনাবোধ।

ভাবছেন, আপনি ব্যক্তি হিসেবে শুধু এককভাবে আপনাকে উপস্থাপন করছেন। প্রকৃত অর্থে তা নয়। বরং আপনি একটি পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রকে উপস্থাপন করছেন। আপনার এমন অনেক অগভীর কথায় আপনার অগোচরে আপনারই জৌলশ হারায়, চরিত্রে কালিমা লাগে। আপনার পরিবারের ভাবমুর্তি উজ্জ্বলতা হারায়। সমাজের চিত্রে কলঙ্ক লাগে। রাষ্ট্র অমর্যাদায় ভূলুন্ঠিত হয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে আমাদের কথা বলা আরো সহজ হয়ে পড়েছে। তাই আমরা যত খুশি তত বলছি, যা ইচ্ছে তাই বলছি। আপন ব্যক্তিতের দিকে দৃষ্টিপাত-কর্নপাত নেই বললেই চলে। ব্যক্তি আপন ব্যক্তিত্বের ব্যাপারে মনোযোগী হবে না। এমনটা কখনই কাম্য নয়। মানুষ জীব, জড়বস্তু নয়; যে তাকে বার্নিশ-পলিশ করে পুননির্মান করা যাবে। ব্যক্তিতে একবার কালিমা লেগে গেলে, তা পুননির্মানের সুযোগ নেই। তাই কথার জলে গাঁ না ভাসিয়ে বরং কথার জলে ডুব দেয়াই হবে ভুলের মাশুল দিয়ে শুদ্ধতার দিকে এক ধাপ হেঁটে চলা।


0 comments: