প্রিয় কাজীবাবু,
হে কবি,
আপনার অনেক কাব্যগ্রন্থ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও আপনার
লেখার উপর অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তিগন মন্তব্য করেছেন। তন্মোধ্যে
বুদ্ধদেব বসু লিখেছেন “গদ্য লেখক হয়ে তিনি জন্মাননি, কিন্তু গদ্যও তিনি লিখেছেন এবং গদ্যে যে তাঁর অতিমুখর মনের বিশৃঙ্খলা সবচেয়ে
দুঃসহ হয়ে প্রকাশ পাবে, সে তো অনিবার্য।আবার অনেকের মুখে শোনা যায় যে
“সাহিত্যে নাকি সর্বদা প্রেম, ভালবাস, মায়া, আবেগের-আদ্রতা ধীর গতিতে প্রবাহিত হয়। এতে কোন
বিদ্রোহী ভাব, সংগ্রামী মনোভাবের স্থান নেই। সাহিত্যে নাকি
ভালবেসে সবকিছু জয় করার কথা কয়।” তাই বিদ্রোহী কবি নজরুলের লেখনি সাহিত্য নয়; সাহিত্যিক মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য নয়।
আর কবি শুধু আপনিই, সাহিত্যের বিচিত্র পথে যাত্রা করেছেন। সাহিত্যের সমস্ত রস আপনি সযত্নে আস্বাদন
করেছেন। এমন কোনো পথ নেই যেখানে আপনার লেখনির
দু-চারটে বর্নমালা ঝরে পড়েনি। আপনার দু-হাত সর্বদা সমান তালে চলে এসেছে। আপনি সব্যসাচী
লেখক হিসেবে বার বার আবির্ভূত হয়েছেন। যেখানে রবিঠাকুর তার জীবন শায়াহ্নে এসে তার
ব্যর্থতার কথা অকপটে স্বীকার করে বলেছেন যে তার কবিতা বিচিত্র পথে অগ্রসর হলেও
জীবনের সকল স্তরের দ্বার খুঁজে পায়নি। তাই তিনি এমন একজন কবির প্রত্যাশা করেছেন-
যে আছে মাটির কাছাকাছি
সে কবির বাণী-লাগি কান পেতে আছি।।
এটা আজ অতি স্পষ্ট। কাজীবাবু সে কবি আপনি
ছাড়া আর কেউ নয়। রবিঠাকুরের সেই প্রত্যাশিত কবি আপনি। আপনার মত অতি নগণ্য সংখ্যক
ক্ষনজন্মা মহাপুরুষরাই কেবল ইহজন্মে নিজকে অসীম চিনতে পারে। আপনি আপনার কবিতায়
নিজকে ধারন করেছেন এভাবে-
হেসো না বন্ধু!আমরা আমি সে কত অতল আসীম,
আমি কি জানি- কে জানে কে আছে আমাতে মহামহিম।।
হে অনাগত কালের কবি,
আপনার জন্য ত কিছুই করতে পারলাম না। পারলাম
না আপনাকে জানতে, পারলাম না আপনাকে মানতে, পারলাম না আপনার হয়ে এ গ্রহে নবজন্মে নিতে; নতুন দিগন্তের পথ উন্মোচন করতে। জানি আপনি কখনো অভিমান করবেন না। তবুও আমরা
প্রার্থনা করছি আপনি স্বর্গে স্রষ্টা্র অতি সুন্দর সৃষ্ট আসন লাভ করেন।আর কোন
দ্বিধা বা সংশয় নেই বলতে, সকল দ্বিধা ও সংশয়ের অবসান ঘটিয়ে আপনি আপনার চরণদ্বয়ের মত সত্য, মহাসত্য, চিরসত্য।।আজ আরো একবার আপনাকে আপনার চিরসত্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।
আমি চির-বিদ্রোহী বীর
বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির!
ইতি
আপনার বিদ্রোহী বীর।
0 comments: