recent

প্রিয় কাজীবাবু ,   আশা করি , ঈশ্বরের কাছে অতি সযত্নে বাংলার অকৃত্রিম ভালবাসা নিয়ে আজও আপনি বেঁচে আছেন।আজ আপনার শুভ জন্মদিন।সে দিনটির...

কাজী বাবুর নিকট একটি অপ্রকাশিত চিঠি



প্রিয় কাজীবাবু,
 আশা করি, ঈশ্বরের কাছে অতি সযত্নে বাংলার অকৃত্রিম ভালবাসা নিয়ে আজও আপনি বেঁচে আছেন।আজ আপনার শুভ জন্মদিন।সে দিনটির কথা আপনার মনে আছে কি। কি করেই বা মনে থাকবে যার মাথায় সর্বদা মানবতা আর ভালবাসার জয়গান পাহাড়ি ঢলের ন্যায় নেমে চলে তার কি নিজের পৃথিবীর কথা মনে থাকে।প্রিয় কবি,আজ আমরা আমদের কিছু ব্যর্থতার কথা কায়মনোবাক্যে স্বীকার করবো বলে লিখতে বসেছি।আমারা আপনার দর্শন লাভ করতে ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু তবুও যে আমারা বার বার আপনার আমি সত্ত্বাকে জল রং এ এঁকে অতি কাছ থাকে দেখার চেষ্টা করেছি।তা অসত্য নয়।যে আমি সত্ত্বাকে আপনি লালন করেছেন যুগের পর যুগ সেই আমিত্বকে।হয়ত আজও আপনি সেই আমি সত্ত্বাকে বুকে ধরে আমাদের পানে চেয়ে আছেন।যে আমি সত্ত্বার কথা আপনি মৃত্যু অবধি কতবার যে বলেছেন তার কোন অন্ত নেই। সেই আমি সত্ত্বাকে চিত্তে স্বগোপনে লালন করে আমরা আপনার দেখানো পথে আপনার প্রান্তে এসে উপস্থিত হব একদিন।

হে কবি,
আপনার অনেক কাব্যগ্রন্থ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও আপনার লেখার উপর অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তিগন মন্তব্য করেছেন। তন্মোধ্যে বুদ্ধদেব বসু লিখেছেন গদ্য লেখক হয়ে তিনি জন্মাননি, কিন্তু গদ্যও তিনি লিখেছেন এবং গদ্যে যে তাঁর অতিমুখর মনের বিশৃঙ্খলা সবচেয়ে দুঃসহ হয়ে প্রকাশ পাবে, সে তো অনিবার্য।আবার অনেকের মুখে শোনা যায় যে সাহিত্যে নাকি সর্বদা প্রেম, ভালবাস, মায়া, আবেগের-আদ্রতা ধীর গতিতে প্রবাহিত হয়। এতে কোন বিদ্রোহী ভাব, সংগ্রামী মনোভাবের স্থান নেই। সাহিত্যে নাকি ভালবেসে সবকিছু জয় করার কথা কয়।তাই বিদ্রোহী কবি নজরুলের লেখনি সাহিত্য নয়; সাহিত্যিক মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য নয়।

আর কবি শুধু আপনিই, সাহিত্যের বিচিত্র পথে যাত্রা করেছেন। সাহিত্যের সমস্ত রস আপনি সযত্নে আস্বাদন করেছেন। এমন কোনো পথ নেই যেখানে আপনার লেখনির দু-চারটে বর্নমালা ঝরে পড়েনি। আপনার দু-হাত সর্বদা সমান তালে চলে এসেছে। আপনি সব্যসাচী লেখক হিসেবে বার বার আবির্ভূত হয়েছেন। যেখানে রবিঠাকুর তার জীবন শায়াহ্নে এসে তার ব্যর্থতার কথা অকপটে স্বীকার করে বলেছেন যে তার কবিতা বিচিত্র পথে অগ্রসর হলেও জীবনের সকল স্তরের দ্বার খুঁজে পায়নি। তাই তিনি এমন একজন কবির প্রত্যাশা করেছেন-

যে আছে মাটির কাছাকাছি
সে কবির বাণী-লাগি কান পেতে আছি।।

এটা আজ অতি স্পষ্ট। কাজীবাবু সে কবি আপনি ছাড়া আর কেউ নয়। রবিঠাকুরের সেই প্রত্যাশিত কবি আপনি। আপনার মত অতি নগণ্য সংখ্যক ক্ষনজন্মা মহাপুরুষরাই কেবল ইহজন্মে নিজকে অসীম চিনতে পারে। আপনি আপনার কবিতায় নিজকে ধারন করেছেন এভাবে-

হেসো না বন্ধু!আমরা আমি সে কত অতল আসীম,
আমি কি জানি- কে জানে কে আছে আমাতে মহামহিম।।

হে অনাগত কালের কবি,
আপনার জন্য ত কিছুই করতে পারলাম না। পারলাম না আপনাকে জানতে, পারলাম না আপনাকে মানতে, পারলাম না আপনার হয়ে এ গ্রহে নবজন্মে নিতে; নতুন দিগন্তের পথ উন্মোচন করতে। জানি আপনি কখনো অভিমান করবেন না। তবুও আমরা প্রার্থনা করছি আপনি স্বর্গে স্রষ্টা্র অতি সুন্দর সৃষ্ট আসন লাভ করেন।আর কোন দ্বিধা বা সংশয় নেই বলতে, সকল দ্বিধা ও সংশয়ের অবসান ঘটিয়ে আপনি আপনার চরণদ্বয়ের মত সত্য, মহাসত্য, চিরসত্য।।আজ আরো একবার আপনাকে আপনার চিরসত্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।

আমি চির-বিদ্রোহী বীর
বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির!

ইতি
আপনার বিদ্রোহী বীর।


0 comments:

সমুদ্রের নোনা জলে আমি যখন ভাসছিলাম , একজন জেলে আমাকে কুড়িয়ে নিয়ে এসেছিল। আমাকে আহার দিয়েছে ; আপন দেউরে পুষেছে ; ...

প্রত্যহ মৃত্যু



সমুদ্রের নোনা জলে আমি যখন ভাসছিলাম,
একজন জেলে আমাকে কুড়িয়ে নিয়ে এসেছিল।
আমাকে আহার দিয়েছে;
আপন দেউরে পুষেছে;
একটি কচি লাউয়ের ডগা যেভাবে তরতর করে বৃদ্ধি পায়;
ঠিক একইভাবে আমিও বেড়ে উঠছিলাম।

সূর্য; যে নিরিবিচ্ছিন্নভাবে সকলকে আলো দিয়ে যায়।
তার আলোও আমি পেতাম; কোনঠাসা এক নিয়মের মাপে;
কি আদরেই না ছিলাম আমি!

বাতাস; যে গুনগুনিয়ে বয়ে যেয়ে মনে স্নিগ্ধ প্রশান্তি এনে দেয়;
কাশবনকে মাতিয়ে রাখে;
পুষ্পদলকে পরাগায়ন মুখর করে;
সেই বাতাসের শনশন ধ্বনিও আমার কানে পৌঁছতে দেয়া হত না।
আমি নাকি অশ্লীল বাক্য শিখে যাব;
আমি নাকি অহেতুক গালমন্দ করব।
কি দঃখের বিষয় বলুন-
তারা আমাকে ভালোবাসত কিন্তু আমাকে বিশ্বাস করত না।

আচ্ছা, গালমন্দ না শিখে কি চলা যায়?
অপরের ভালোর জন্য তো মিথ্যাও বলতে হয়।
সৈরাচার আছে বলেই তো পৃথিবীর ইতিহাসে এতো বিপ্লব।
তাহলে আমাকে কোনঠাসা করে রেখে কিংবা আমাকে একটি বেড়াজালে আটকিয়ে রেখে;
কীভাবে আমার ভালো চাওয়া হয়
কীভাবে আমাকে ভালোবাসা হয়?

রুমীর মায়ের মতো আমরা ভালোবাসতে জানি না।
আমাদের ভালোবাসা স্তুপকৃত পড়ে রয়
দু'পায়ে উঠে মেরুদন্ড টান করে একটি বেনামী ভ্রূণকে বাঁচাতে পারে না।
মায়ের ভালোবাসা পেয়ে রুমীর মতো আমরা চির অমর হতে পারি না।

আমাকে বালি-মাটির সাথে খেলা করতে দেয়া হত না।
আমি নাকি নোংরা হয়ে যাব।
আমার গাঁ থেকে নাকি দূর্গন্ধ ছড়াবে;
কি নির্মম বলুন-
কিন্তু এই আমি তো মাটিরই তৈরি!
আমি যখন শ্বাস নেই;
আমার ফুসফুস থেকে একগাদা মাটিরই দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে।

আমি যখন ভালোবাসতে শিখলাম
আমাকে বলা হল; এগুলো করা যাবে না।
লোকে মন্দ বলবে; এগুলো পাপ।
আমি নাকি নষ্ট হয়ে যাব।
কি পরিতাপের বিষয় বলুন-
আমার মাঝে যখন ভালোবাসার অংকুরোদগম হবে হবে;
তখন থেকেই শিখানো হল ভালোবাসা নাকি যৌনকাংখা।
আমাকে একবারও বুঝানো হলো না- ভালোবাসা হলো রক্তগঙ্গার মেলবন্ধন;
একটি ঝর্নার নিরন্তন আহাজারি;
ভালোবাসা হলো- ঈশ্বরীয় অমৃত সুধা জীবন সায়াহ্নের অপরিমেয় চাওয়া।
ভালোবাসা হলো- প্রাণহীন প্রস্তরের বুকে সবুজ জীবনের আজীবন আবাস;
পৃথিবীর বুকে একমাত্র সর্গীয় স্রোতধারা।
আমাকে একবারও বুঝানো হল না!

এভাবে ভালোবাসাহীন দিন দিন আমি বেড়ে উঠতে থাকলাম।
যেমন বাড়ে একটি দেহের নানান উপাখ্যান কিংবা একটি মৃত শরীর অথবা একটি শৃঙ্খলহীন মিথ্যা।
তবুও আমি মানুষ রূপে হাঁটছি, খাচ্ছি, কথা বলছি।
সবাই আমাকে মানুষ বলেই ডাকছে।
কিন্তু কেন জানি আমি সবার সাথে আলিঙ্গন করতে পারছি না।
শেষকৃত্যের দিন নিয়ম মানার তাগিদে যেমন মানুষ দলে দলে এসে ভিড় করে;
আমার সাথে ঠিক সেরকমই হচ্ছে।
কি অদ্ভুত বলুন- মানুষ রূপে আমার অস্তিত্ব তো এখনো বিরাজমান।
নাক, কান, গলা, নান্দনিক মুখশ্রী, সুঠাম অভয়ব;
সবই তো আমার বর্তমান।
সবাই যা খায়; তা' খেয়ে আমি পরিপুষ্ট আপাদমস্তক।
তবে কেন আমি সবার সাথে আলিঙ্গন করতে পারছি না?

নিষ্প্রাণ দেবতাকে যেভাবে সবাই পূজো দেয়
ঠিক একইভাবে আমাকে সংবর্ধনা দেয়া হলো
অধোবদন করা হলো
কিন্তু কারো চোখে সৌহার্দের লেশমাত্র দেখিনি।
কারন আমি প্রাণহীন দেবতারই সর্বনাম।
কি করুনব্যঞ্জক বলুন
আমি দেবতার আসনে সমাসীন হয়েছি ঠিকই বটে
কিন্তু একটি জীর্ন ঝিনুক আমাকে প্রনাম করেনি
দল বেঁধে কিছু শামুকও আসেনি
আমার জন্য একটু জল নিয়ে।  
আসলে আমার জন্মই হয়নি!
অথবা আমি জন্মেছিলাম- যেখানে পৃথিবী নেই এমন একটি জায়গায়।


0 comments: