সমুদ্রের নোনা জলে আমি যখন ভাসছিলাম,
একজন জেলে আমাকে কুড়িয়ে নিয়ে এসেছিল।
আমাকে আহার দিয়েছে;
আপন দেউরে পুষেছে;
একটি কচি লাউয়ের ডগা যেভাবে তরতর করে বৃদ্ধি পায়;
ঠিক একইভাবে আমিও বেড়ে উঠছিলাম।
সূর্য; যে নিরিবিচ্ছিন্নভাবে সকলকে আলো দিয়ে যায়।
তার আলোও আমি পেতাম; কোনঠাসা এক নিয়মের মাপে;
কি আদরেই না ছিলাম আমি!
বাতাস; যে গুনগুনিয়ে বয়ে যেয়ে মনে স্নিগ্ধ প্রশান্তি এনে দেয়;
কাশবনকে মাতিয়ে রাখে;
পুষ্পদলকে পরাগায়ন মুখর করে;
সেই বাতাসের শনশন ধ্বনিও আমার কানে পৌঁছতে দেয়া হত না।
আমি নাকি অশ্লীল বাক্য শিখে যাব;
আমি নাকি অহেতুক গালমন্দ করব।
কি দঃখের বিষয় বলুন-
তারা আমাকে ভালোবাসত কিন্তু আমাকে বিশ্বাস করত না।
আচ্ছা, গালমন্দ না শিখে কি চলা যায়?
অপরের ভালোর জন্য তো মিথ্যাও বলতে হয়।
সৈরাচার আছে বলেই তো পৃথিবীর ইতিহাসে এতো বিপ্লব।
তাহলে আমাকে কোনঠাসা করে রেখে কিংবা আমাকে একটি বেড়াজালে আটকিয়ে রেখে;
কীভাবে আমার ভালো চাওয়া হয়
কীভাবে আমাকে ভালোবাসা হয়?
রুমীর মায়ের মতো আমরা ভালোবাসতে জানি না।
আমাদের ভালোবাসা স্তুপকৃত পড়ে রয়
দু'পায়ে উঠে মেরুদন্ড টান করে একটি বেনামী ভ্রূণকে বাঁচাতে পারে না।
মায়ের ভালোবাসা পেয়ে রুমীর মতো আমরা চির অমর হতে পারি না।
আমাকে বালি-মাটির সাথে খেলা করতে দেয়া হত না।
আমি নাকি নোংরা হয়ে যাব।
আমার গাঁ থেকে নাকি দূর্গন্ধ ছড়াবে;
কি নির্মম বলুন-
কিন্তু এই আমি তো মাটিরই তৈরি!
আমি যখন শ্বাস নেই;
আমার ফুসফুস থেকে একগাদা মাটিরই দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে।
আমি যখন ভালোবাসতে শিখলাম
আমাকে বলা হল; এগুলো করা যাবে না।
লোকে মন্দ বলবে; এগুলো পাপ।
আমি নাকি নষ্ট হয়ে যাব।
কি পরিতাপের বিষয় বলুন-
আমার মাঝে যখন ভালোবাসার অংকুরোদগম হবে হবে;
তখন থেকেই শিখানো হল ভালোবাসা নাকি যৌনকাংখা।
আমাকে একবারও বুঝানো হলো না- ভালোবাসা হলো রক্তগঙ্গার মেলবন্ধন;
একটি ঝর্নার নিরন্তন আহাজারি;
ভালোবাসা হলো- ঈশ্বরীয় অমৃত সুধা জীবন সায়াহ্নের অপরিমেয় চাওয়া।
ভালোবাসা হলো- প্রাণহীন প্রস্তরের বুকে সবুজ জীবনের আজীবন আবাস;
পৃথিবীর বুকে একমাত্র সর্গীয় স্রোতধারা।
আমাকে একবারও বুঝানো হল না!
এভাবে ভালোবাসাহীন দিন দিন আমি বেড়ে উঠতে থাকলাম।
যেমন বাড়ে একটি দেহের নানান উপাখ্যান কিংবা একটি মৃত শরীর অথবা একটি শৃঙ্খলহীন মিথ্যা।
তবুও আমি মানুষ রূপে হাঁটছি, খাচ্ছি, কথা বলছি।
সবাই আমাকে মানুষ বলেই ডাকছে।
কিন্তু কেন জানি আমি সবার সাথে আলিঙ্গন করতে পারছি না।
শেষকৃত্যের দিন নিয়ম মানার তাগিদে যেমন মানুষ দলে দলে এসে ভিড় করে;
আমার সাথে ঠিক সেরকমই হচ্ছে।
কি অদ্ভুত বলুন- মানুষ রূপে আমার অস্তিত্ব তো এখনো বিরাজমান।
নাক,
কান, গলা, নান্দনিক মুখশ্রী, সুঠাম অভয়ব;
সবই তো আমার বর্তমান।
সবাই যা খায়; তা'ই খেয়ে আমি পরিপুষ্ট আপাদমস্তক।
তবে কেন আমি সবার সাথে আলিঙ্গন করতে পারছি না?
নিষ্প্রাণ দেবতাকে যেভাবে সবাই পূজো দেয়
ঠিক একইভাবে আমাকে সংবর্ধনা দেয়া হলো
অধোবদন করা হলো
কিন্তু কারো চোখে সৌহার্দের লেশমাত্র দেখিনি।
কারন আমি প্রাণহীন দেবতারই সর্বনাম।
কি করুনব্যঞ্জক বলুন
আমি দেবতার আসনে সমাসীন হয়েছি ঠিকই বটে
কিন্তু একটি জীর্ন ঝিনুক আমাকে প্রনাম করেনি
দল বেঁধে কিছু শামুকও আসেনি
আমার জন্য একটু জল নিয়ে।
আসলে আমার জন্মই হয়নি!
অথবা আমি জন্মেছিলাম- যেখানে পৃথিবী নেই এমন একটি জায়গায়।
0 comments: