recent

ঐ দিন কলিং বেল বাজতেই দরজা খুলে দেখি, আরে। এ কি! খোদ বিয়ার গ্রিলস বাসায় এসে হাজির। - আরে ওস্তাদ। আপনি এখানে। - ঐ বেটা মসকরা করস। আম...

বিয়ার গ্রিলস ও আমি


ঐ দিন কলিং বেল বাজতেই দরজা খুলে দেখি, আরে। এ কি! খোদ বিয়ার গ্রিলস বাসায় এসে হাজির।
- আরে ওস্তাদ। আপনি এখানে।
- ঐ বেটা মসকরা করস। আমি তোরে মুরিদ করলাম কবে? থাপাড়াইয়া যামির দাঁত আড়াই ইঞ্চি ধাবাইয়া ফেলমু। ফাউল কোনহানের।
- ওস্তাদ, এক গেলাস লেবুর শরবত দিমু। দেইখা মনে হয়, অনেক জার্নি করে আসছেন।
- তোর লেবুর শরবত তুই খা। বাপের নাম ডুবাইয়া খা। তোর বাপের জনমে তুই কোনো দিন আমারে লেবুর শরবত খাইতে দেখছস। গরদব কোনহানের। সবসময় সাপ-ব্যাঙ-কেঁচো-কাউয়া খাইয়া আসতাছি। তুমি কিনা আসছ আমারে লেবুর শরবত খাওইতে। তোর লেবুর শরবত খাইলেতো আমার বদহজম হইব। আকাম বলানের তালে আছ।
- ওস্তাদ, তাইলে কি এক গেলাস দুধ দিমু?
- হ্যাঁ, দিতে পারস। অনেক দিন যাবৎ দুধ খাই না। গত কবে যে দুধ খাইছিলাম, সেইটাও ভুইলা গেছি।
- ওস্তাদ, গরম নাকি ঠাণ্ডা?
- ঠাণ্ডা দুধের চাক্কা আইনা দে। চুইষা চুইষা খাই। ফাউল কোনহানের। দুধ কি ফ্রিজ থেকে নামাইয়া ডগডগ করে খাওয়ার জিনিস। নামালি আর খালি। তোর দুধের গোষ্ঠী মারি। তোর দুধ তুই খা। কামড়াইয়া খা, ছিঁড়া খা। যেমনে খুশি তেমনে খা।
- ওস্তাদ, তাইলে এ অধম আপনার জন্য কি করিতে পারি?
- কিছু করতে হইব না। বিয়া করছস?
- জ্বী না।
- তাইতো বলি তোর এত বুদ্ধি-সুদ্ধি কম কিলিগা।
আমারে সাধস লেবুর শরবত! স্বয়ং বারাক ওবামারে হোয়াইট হাউস থেকে নিয়া পোক-জোক, সাপ-ব্যাঙ খাওইয়া ছাইড়া দিছি। তুমি আইছ আমারে লেবুর শরবত খাওয়াইতে। সামনের থেকে হর।
- ওস্তাদের মেজাজটা চড়া দেখা যায়। ব্যাপার কি?
- ব্যাপার অতি তুচ্ছ। হেলিকাপ্টারে করে আমারে পুরান ঢাকায় নামায় দিয়া গেছে। এখানে নাকি আমার এ্যাডবেঞ্চার করতে হবে। এক গলি দিয়া সতেরবার রাউন্ড দিছি। মাগার আরেক গলি খুইজা পাইতাছি না। সব গলি এক রকম লাগে। ভুলেতো এক সদ্য দম্পতির ঘরে আপন মনে ঢুইকা পড়ছিলাম। কি যে পিটানি আমারে। শেষ পর্যন্ত আন্ডারওয়ারের কিয়দংশটুকুও খুইজা পাইতাছি না।
- তাইলে ওস্তাদ একটু গরম পানি করি। ফ্রেশ একটা গোসল দিয়ে শিরায় টানটান হয়ে ঘুম দেন।
- এইটা ভালো বলছস। দে, তাইলে একটু গরম পানি দে।
চুলায় পানি গরম দিয়ে আবার আমি ওস্তাদের পাশে এসে বসি। ওস্তাদ ব্যাগ থেকে কি যেন বের করছে। আমি চোখ বড় বড় করে ব্যাগের দিকে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি- ওস্তাদ কি আবার বাজারসধাই নিয়া আসছে নাকি? ওমা, এগুলা কি?
- তোমার বাপের মাথা। এত বড় ধামরা হইছ, এখনো এগুলা চিন না? নাইন-টেনে বিজ্ঞান বই কি মাথায় নিয়া দৌড়াইছ? পৃষ্ঠা উল্টাইয়াও দেখ নাই। এখন কিছুই চিন না। ধর, এই ব্যাগে সাড়ে তিন কেজি কৃমি আছে। ছোট কৃমি-বড় কৃমি, ইতি কৃমি-বিথী কৃমি, গুরা কৃমি-বুড়া কৃমি, ফিতা কৃমি- সিতা কৃমি। নাম না জানা আরো অনেকে।
এগুলা দিয়া মাখামাখা কইরা একটা ঝোল রান্না কর। দুই জনে একসাথে খামু।
- কি কন? ওস্তাদ।
- রবীন্দ্র সংগীত গাই। বাংলা কথা বুঝ না। না বুঝলে হেয়ারিং এইড হিসেবে এক জোড়া গুরা কৃমি কানে ঢুকাও। টুয়েন্টি ফোর আওয়ার্স অন নেট ও অফ নেট সার্ভিস দিব।
- ওস্তাদও দেখি, আমার সাথে মজা লন। লন লন, আসছেন আমার অতিথি হয়ে, আমার লগে মজা না লইলে কি আপনি সুর সম্রাট মাহফুজুর রহমানের সাথে মজা লইবেন।
- ঐ বেটা আজাইরা কথা রাখ। এখন কিন্তু শাস্তি হিসেবে তোর কৃমির চরচরি রাইধা খাওইতে হইব। বাঁচতে চাইলে চালু চালু কৃমির ভুনা চুলায় বসা।
- ওস্তাদ, আমিতো রান্নাবান্না করতে পারি না। তার উপরে আবার কৃমির ভুনা। রেসিপিটা একটু কঠিন হইয়া গেল না? ইউটিউবে সার্চ দিয়াও সিমিলার কোনো রেসেপি খুইজা পাইতাছি না। ক্ষমা মার্জনা করে রান্নার ফরমেটটা একটু বলবেন। এই অধম বড়ই কৃতার্থ হইতাম।
- আরে রাখ তোর কৃতার্থ। সাহিত্য ছাড়। কালকে তুই আমারে পুরান ঢাকায় অলি-গলি চিনাবি। এখন ভালো ভালো ভুনাটা চুলায় বসা। যদি না পারস, কেউরে ডেকে দুইজনে মিলে রান্না কর।
- ওস্তাদ, এই তিলোত্তমা ঢাকায় আমার কেউই নাই। কারে ডাকব।
- গার্লফ্রেড আছে?
- জ্বী, আছে।
- তাইলে তো হয়েই গেল। ওরে ডাকায় আন। দুই জনে মিলে রান্না কর, তিন জনে মিলে খামুনে।
- ওস্তাদ কি পাগল হয়ে গেছেন? ওরতো তেলাপোকা দেখলে কুচকাওয়াজ করতে করতে চোখ বড় বড় করে দম যায় যায় অবস্থা। ও চব্বিশ ঘন্টা ছারপোকার ঔষধ সাথে নিয়া ঘুরে বেড়ায়।
- তুই যেমন আহাম্মক। তোর গার্লফ্রেন্ড আরেক আহান্মক। দুই আহাম্মক একসাথে মিলছে। রান্না তোদের করতেই হবে। তুইও করবি, তোর গার্লফ্রেন্ডও করব। দরকার পরলে পুরা ঢাকাবাসীরে তোদের রান্না করা কৃমির রেসিপি দিয়া মধ্যাহ্নভোজ করামু। যা, ফাউ প্যাঁচাল না পাইরা, রান্না বসা।
আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে, অবশেষে গার্লফ্রেন্ডকে ফোন দেই। সারপ্রাইজ দেয়ার কথা বলে বাসায় আনি। বাসায় এসে ওর চৌদ্দ গোষ্ঠী জীবনে যে সারপ্রাইজ দেখে নাই, ও ঐ সারপ্রাইজ দেখে আচমকা আমার গালে কষিয়ে এক চড় বসিয়ে দিল। সাথে বলল- ফাজলামো করার আর জায়গা পাও না। মাইয়া মানুষ দেখলেই ফাজলামি করতে মন চায়। থাপড়াইয়া চোয়াল কিন্তু দুই ইঞ্চি আলগা করে ফেলমু। তোরে এই অদ্ভুত ধরনের আইডিয়া দিছে কোন হারামজাদায়। ওরে বের কর। ওর গালে কষিয়ে একটা চড় দিয়া সারপ্রাইজ দিয়া দেই।
আমি ওস্তাদেরে খুঁজতে খুঁজতে পাশের রুমে যাই। গিয়ে দেখি, বিয়ার গ্রিলস মামা জানালা দিয়া লাফ মাইরা, ভেটকি মাছের মতো ভেটকাইয়া চিত হইয়া পইরা রইছে।

0 comments: