recent

তখন আমার বয়স আর কতই বা! এই ধরো ছয় কিংবা সাত। সবে কাদা আর মাটি মিশিয়ে খেলতে শিখেছি বাড়ির আশেপাশে কুড়িয়ে পাওয়া বীজগুলো আবাদ কর...

তুই আর আমি



তখন আমার বয়স আর কতই বা!
এই ধরো
ছয় কিংবা সাত।
সবে কাদা আর মাটি মিশিয়ে খেলতে শিখেছি
বাড়ির আশেপাশে কুড়িয়ে পাওয়া বীজগুলো আবাদ করতে শিখেছি
প্রায়শ পিপাসার্ত বীজের পানির যোগান দিতে গিয়ে বেমালুম ভুলে গিয়েছি
নিজের তৃষ্ণার কথা।


কিন্তু একদিন হঠাৎ লদে রঙের পাহাড়ি স্বর্ণলতা হাতে পেঁচাতে পেঁচাতে মহামায়াকে বললাম
আচ্ছা, আমি যদি স্বর্ণলতামশ্রিত হাতে তোকে খুব করে ছুঁয়ে দেই
তুই কি বড্ড অভিমান করবি?
খেলতে আসবি না আমার সাথে?
কথা বলবি না দিন দশেক?
আমাকে দেখলে পালিয়ে বেড়াবি এ বাড়ি- ও বাড়ি?
তেল বেগুনে জ্বলে উঠবি খুব করে?
ফুসলে উঠবি ময়ূরের পেখোমের মতো?


মহামায়া নিভো নিভো চোখে সচকিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল আমার দিকে
বলল, বাহরে! তুই ছুঁয়ে দিব নাতো কে ছুঁয়ে দিবে আমায়?
তোর মতো কে'ই বা আছে আমার?
যে আমাকে হিজল বনে পাতার বাঁশি বাজিয়ে শোনায়
রাতে জোনাকিপোকা ধরে দেয়
জলে নেমে একরাশ পদ্ম তুলে দেয়
আর কত রাশিরাশি বিচিত্র গল্প শোনায়!


আচ্ছা তোর কি মনে আছে?
আষাঢ়ের নবঘন কালে তুই আমি শাপলা তুলতে বিলে গিয়েছিলাম।
কালোমেঘগুলো যখন ধেয়ে আসছিল
তোর আর আমার সে কি হন্য হয়ে ছুট!
যেন কোনো ভাঙন আমাদের ছুঁতে পারবে না
ছুঁতে পারবে না স্নিগ্ধ সরেস একফোঁটা জলকনাও
ষোড়শী মেঘও থেমে যাবে দূর আকাশে
আমাদের আকাশ থেকে অনেক দূরে
তোর কি মনে পড়ে?


তুই বেশ অভিমানী ছিলি
রাগ হয়ে তোকে কথাই বলা যেত না
একটু জোরে কথা বললে-
তোর মুখ যেন পুইলতার ন্যায় নেতিয়ে যেত
সেই নেতানো মুখ বর্ণীল করতে আমার যে-
কত মাঘের রাতে শিশির জমাতে হয়েছে
তোর মনে আছে নিশ্চয়ই?
কেমন যেন এক অদ্ভুত রকমের ভায়না ছিল তোর
যেন বাধানহীন; মানে না কোনো পুরাণ,
না মানে কোনো শৈল্পিক কল্পনা
হৃদয় গহ্বরের সমস্ত কিছু সযত্নে নিয়ে অবিরাম ছুটে চলে নক্ষত্রের দেশে
যেখানে হাজারটা চাঁদ আর ডানাভর্তি আলো
মাতামাতি হয়ে খেলা করে।


0 comments: