recent

বার ' টা ছিল শনিবার। সময়টা ছিল রাত পৌনে তিনটা। আমি ঢাকা চিটাগাং মহাসড়ক ধরে হাঁটাছি। পথে দেখি দেওয়ানবাগীর পীর রবীন...

আমি ও দেওয়ানবাগীর পীর সাহেব


বার'টা ছিল শনিবার। সময়টা ছিল রাত পৌনে তিনটা। আমি ঢাকা চিটাগাং মহাসড়ক ধরে হাঁটাছি। পথে দেখি দেওয়ানবাগীর পীর রবীন্দ্রনাথের মতো সাদা একখানা আলখাল্লা পরে এলোপাথাড়ি দৌঁড়-দৌঁড়ী করছে। আমি তাকে থামিয়ে বললাম, "জনাব, ক্ষমা মার্জনা পূর্বক আপনার দৌঁড়-দৌঁড়ীর কারন জানতে পারি।"

- আরে রাখ মিয়া তোমার কারন। তিন রাত ধরে ঘুমাইতে পারি না। খালি উল্টা পাল্টা স্বপ্ন দেখি।

- তা জনাব! কি সে স্বপ্ন? - আর কইয়ো না! স্বপ্নে দেখি, কে যেন আমারে চার রাস্তার মোড়ে নিয়া আইক্কাওয়ালা বাঁশ দিয়া খারা করায় রাখতে চায়।

- না, জনাব। আপনার বোধহয় কোথাও ভুল হচ্ছে। আপনার যে সাইজ! আপনারে বাঁশ দিতে হলে তো অনেক বাঁশের প্রয়োজন। কেউ জেনে-শুনে হয়ত এই অপচয়টুকু করবে না। তাছাড়া যে কারোর জীবনে বাঁশের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আপনার এই ন্যূনতম প্রয়োজনটুকু অনুধাবন করে হয়তো আপনার জন্য কারো সহানুভূতি জেগেছে। যার ফলশ্রুতিতে তিনি আপনাকে স্বপ্নলোকে বাঁশ দিতে চায়। তাছাড়া সামান্য সংখ্যক বাঁশের অভাবে আপনি বাঁশবিহীন জীবন যাপন করবেন। তা কি হয়? আচ্ছা জনাব, উক্ত ব্যক্তি আপনাকে কি ধরনের বাঁশ দিতে চায়? মুলি বাঁশ নাকি বরাগ বাঁশ।

- মিয়া, ফাইজলামি রাখ। তোমার মতো কত ইতর-বদমাইশ ফুঁ দিয়া ঠিক করলাম। আর তুমি কর আমার সাথে ফাইজলামি। বান মাইরা কিন্তু মাইরা ফেলমু। তখন বুঝবা ঠেলা। যাই হোক, জানি তোমার বয়স কম, বয়সে একটু কিউরিসিটি থাকে যার দরুন তুমি বাশের ধরন জানতে চাইস। আমি তোমাকে পূর্বেও বলেছি, এখনো বলছি, স্বপ্নললোকে আগত ব্যক্তি আমাকে আইক্কাওয়ালা বাঁশ দিয়ে খাড়া করায় রাখতে চায়।

- জনাব, ক্ষমা মার্জনা করবেন। তবে জনাব এত রাত্রে এদিক সেদিক ঘুরোঘুরি করা ঠিক হবে না। চারদিকে তো আর ইতর-বদমাইশ লোকের অভাব নাই। কে না কে এসে আপনার আলখাল্লার পকেটে এক পুটালা ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে বলবে, "আপনি ইয়াবা বাবা। দেশের সুখ্যাতি সুসম্পন্ন ইয়াবা ডিলার।" পরে তো আপনাকে কারা প্রকোষ্ঠে নিয়ে আপনার উদাসীন পশ্চাৎ পথে উত্তপ্ত অশ্বডিম্ব ঢুকাবে আর জিজ্ঞেস করবে, "দিনে কয়' খাস আর কয়' বেচশ। তাড়াতাড়ি বল হারামজাদা। না হলে কিন্তু পশ্চাৎ পথের পাশাপাশি মুখ গহ্বর দিয়ে জোড়ায় জোড়ায় ডিম ঢুকাব। থাকস সাধুর মতো আর কাম করস সব আকাম। নালায়েক।"

- কথা খারপ কও নাই। তুমি ইতর হইলেও ভালো পোলা।

- তা জনাব। এখানে আর না দাঁড়িয়ে চলেন, আমার বাসায় চলেন। আপনার স্বপ্নের একটা বিশদ সমাধান টানতে হবে। সেদিনের মতো আমরা ভোরের আলো ঠেলে বাসার গেটে এসে পৌঁছলাম। গেটে এসে দেখি দারোয়ান কাকু নিবিড় তন্দ্রাচ্ছন্ন। সাথে তারে বোবায় ধরছে। একা একা খুব দস্তাদস্তি করছে। জনাব আমাকে জিজ্ঞেস করে, "আসলে ওর হইছেটা কি? ব্যাঙের মতো গোংগাইতাছে কেন?" আমি বললাম, " বোধহয় বোবায় ধরছে।"

- ওরে টান দিয়া আমার কাছে দে। আজকে ওর একদিন কি আমার একদিন। কত বোবারে থাপড়াইতে থাপড়াইতে চিরতরে গোংগানি জব্দ করে ফেললাম। আর এমন কি। আর তো একটা আন্ডাবাচ্চা।

সেদিনের মতো দারোয়ানকে পীর কেবলা এমন এক জায়গায় আঘাত করে, দারোয়ান জীবনের তরে বোবাপনা ভুলিয়া যায়।

তারপর আমরা সাত-সকালে ওপেনলি ডাইল দিয়ে ভাত খেয়ে সারা দিন বিশ্রাম নেই। শরীর উপর দিয়ে ধকল তো আর কম যায়নি। পরদিন সকালে উঠে দেখি পীরজাদা পোটকা মাছের মতো সমস্ত বিছানা দখল করে উপুত হয়ে শুয়ে আছে। আমি আমার কোমল হাতে কয়েকবার স্পর্শ করে তাকে জাগানোর চেষ্টা করলাম। তার কোনো সারা নেই। উপায় না পেয়ে ইউটিউবে "এসো ঘুম ভাঙ্গানি শিখি" টিউটোরিয়াল দেখে সেই ফরমুলা এপ্লাই করলাম। বড্ড কাজে দিল। পীরজাদার (বৃত্তাকার না আয়তকারও না) ঈষৎ সচ্ছ তুলতুলে দেহখানার উপরে উঠে সিসিমপুরের হালুমের ন্যায় মিনিট পাঁচেকের মতো ডিংকাচিকা নেচে বিশাল দেহকার-স্থূলকায় প্রাণপ্রিয় পীরজাদার ঘুম ভাঙাই। পীরজাদার ঘুম ভাঙাতে পেরে আমার সর্বসাকুল্যে সগর্বে বুকখানা ভরে উঠে। কারন জীবনে ইহাই আমার সর্বাপেক্ষা বড় অর্জন। পীরজাদাও খুশি। কেননা আমার সম্পর্কে তার প্রাথমিক ধারনা দিন দিন ভুল প্রমাণিত হচ্ছে। আমি আকামের পোলা না কামের পোলা।

পীরজাদা আমার ক্রিয়েটিভিটি দেখে প্রেরণা সরূপ ট্রিট দিতে চাইল। আমি বারবার না করার ফলেও তিনি তার অবস্থান থেকে অনড়। তিনি ট্রিট দিবেনই দিবেন। কি আর করার তিনি আমাকে বাসায় রেখে কাচ্চি আনতে বাহিরে গেলেন। বাহিরে এসে তার ভালোই লাগছে। একটানা ঘুম শেষে বাহিরের আলোটা খুব একটা খারাপ লাগছে না। তাছাড়া সকালে গরুর চামড়ার ন্যায় এক ধামড়া ছেলের পাড়ানি তো আর কম খায়নি। যাক এগুলো নিয়ে এখন মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। এখন ভালো আছি সেটাই বড় বিষয়। তাই পীরজাদা হেসে খেলে খানিক সচেতন, খানিক অচেতন খানিক অবচেতন মনে হাঁটতে শুরু করলেন। পীরজাদার ভাগ্য কি সুপ্রসন্ন! শতভাগ অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি রাস্তার মাঝে চির বেহায়ার মতো হাঁ করে থাকা ম্যানহোলের ভিতর পড়ে গেল। কোন অসভ্য ম্যানহোলের ঢাকনাটা খুলে রেখে গেছে, কে জানে? ন্যূনতম কমনসেস্নটুকুও নেই। একটা চিহ্ন দিয়ে যেতে পারতো ? সরকার কি সব বাজে লোকদের যে কাজ দেয়? পীরজাদা অসহায়ের ন্যায় এগুলোই ভাবছে।

পীরজাদার অপেক্ষায় বসে থাকতে থাকতে আমি অধৈর্য হয়ে পড়ালাম। তাৎক্ষণিক বেরিয়ে পীরাজাদাকে খুঁজে পেতে এদিক সেদিক ছুটোছুটি শুরু করলাম। হঠাৎ দেখি- পীরজাদা ম্যানহোলের ভিতর আটকে পড়ে আছে। এক তৃতীয়াংশ ম্যানহোলের ভিতরে আর দুই তৃতীয়াংশ ম্যানহোলের বাহিরে। যে সাইজ, সাইজে ম্যানহোলের ভিতরে পুরো দেহ নিয়ে রীতিমতো যাওয়া অনেকটা অসাধ্য। আমি যথেষ্ট চেষ্টা তদবির চালিয়েও তাকে টেনে বের করতে পারলাম না। পরে ওয়াসার কর্মীরা এসে রাস্তা কেটে তাকে বের করে। উল্লেখ্য যে তাকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা যায়নি। ওয়াসার কর্মীদের অসতর্কতা খেয়ালিপনার কারনে পীর কেবলার একটি অন্ডকোষের অকাল প্রাণহানি ঘটে। পরে পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, অন্ডকোষটি কোনো কারন ছাড়াই লাপাত্তা হয়ে যায়নি। মূলত ওয়াসার কর্মীদের অসাবধান আঘাত এলোমেলো খুঁড়াখুঁড়ির কারনে অন্ডকোষটি ফাটিয়া গলিয়া ড্রেনের জলের সাথে মিশিয়া গেছে। তা নিয়া পীর কেবলা যথেষ্ট আফসোস থাকলেও সমাজ তা মানিয়া লইতে চায় না। কারন যা হারনোর তা ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছে। বরং তার নিয়ে আফসোস করা উচিত যে তিনি তার পীরানি শক্তি বলে তা কুক্ষিগত করে রাখতে পারেনি।

যাই হোক পীরজাদাকে উদ্ধারের পর অন্ডকোষ সংক্রান্ত প্রাথমিক চিকিৎসা আমিই দিয়েছিলাম। পরে সদ্য সুন্নতে খাৎনা (মুসলমানি) করা শিশুরা যেভাবে হাঁটে সেভাবে পীরজাদাকে হাঁটিয়ে বাসা অবধি নিয়ে এসেছিলাম। রাস্তায় কিছু দুষ্ট-অভদ্র-লম্পট ছেলেরা কন্ঠে যথেষ্ট তাজিম মনে উপচে পরা তাচ্ছিল্য নিয়ে জিজ্ঞেস করে, তা মশাই, কোনটা হারিয়েছেন? ডান সাইডেরটা না বাম সাইডেরটা? আমি আগ্নেয়গিরি দেখিনি তবে তখন পীরজাদার চোখে রক্তবর্ণ আগ্নেয়োৎপাত দেখেছি।

পরদিন পীরজাদাকে নিয়ে একজন সাইকিয়াট্রিস্টের নিকট যাই। কারন গোড়া থেকে যদি সমস্যাগুলো সমূলে উৎপাটন করা না যায়, তাহলে সমস্যা আরো প্রকট হয়ে সমস্যাই থেকে যায়। প্রথম থেকেই যদি পীরজাদার গোড়ার সমস্যাগুলোর দিকে সজাগ দৃষ্টি দেয়া হত, হয়তো তার চির অরুণ, ষড়শী অন্ডকোষের অনির্বচনীয়ভাবে অকাল প্রাণহানি ঘটতো না। যাই হোক, পীরজাদাকে নিয়ে সাইকিয়াট্রিস্টের রুমে ঢুকতেই সাইকিয়াট্রিস্ট পীরজাদাকে দেখে দৌড়ে এসে তার পায়ে লুটিয়ে পড়ে বলল, "বাবা, আমারে বাঁচান। গত তিন দিন ধরে নিয়মিত আপনার দরবারে যাচ্ছি। কিন্তু আপনার অকর্মণ্য-অপদার্থ খাদেমরা আপনার ব্যাপারে কোনো সন্ধান দিতে পারেনি। শুধু বলে, বাবায় তো নাই! বাবায় গত পনেরো দিন যাবৎ উধাও। আমরা যথেষ্ট অনুসন্ধান চালাচ্ছি। কিন্তু সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্যবশত তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।"

- আচ্ছা, কি কারনে গেয়েছিলি; এখন বল? বিশেষ কোনো কারন?

- জ্বী হুজুর। অতীব বিশেষ কারন। গত কয়েক সপ্তাহ যাবৎ কে যেন আমারে চার রাস্তার মোড়ে নিয়া আইক্কাওয়ালা বাঁশ দিয়া খারা করায় রাখতে চায়।

- আরে কও কি! সমস্যার চিকিৎসার জন্যই তো তোমার কাছে আসলাম। এখন দেখি তোমারেও আইক্কাওয়ালা বাঁশ দিয়া খাড়া করায় রাখতে চায়। হায় হায়! খুব মসিবতের মধ্যে পড়লাম।

তারপর আমি অপ্রস্তুত পীরজাদাকে আরো একটি তথ্য দিয়ে তার টেনশনের মাত্রাটা মৃদু বাড়িয়ে দিলাম। তথ্যে উল্লেখ্য ছিল যে "শ্রদ্ধাভাজন পীরকেবলা, সত্যমিথ্যা যাচাইবিহীন এইমাত্রা পাওয়া খবর থেকে বলছি, আপনি আপনার আধা-পাগল সকল আশেকবৃন্দ একই স্বপ্ন দর্শনার্থে দুষ্ট।"

পীরজাদা উক্ত তথ্য শুনিবামাত্র দুই-দুইটা জলজ্যান্ত মানুষের সামনে খারার উপরে ফিট খাইয়া পড়ে গেল। আমরা প্রথমে ভাবছিলাম আসলে এইটা পীরজাদার ভন্ডামি। পরক্ষনে বুঝিতে পারিলাম ঘটনা সত্যই ঘটিয়াছে। কারন পীরজাদা আর যা কিছুই নিয়া ভন্ডামি করলেও ফিট খাওয়া নিয়া তিনি কখনো ভন্ডামি করে না। ধরনের ভন্ডামি তার রন্ধ্রে নেই। এটা তিনি তার উত্তরাধিকারী সূত্রে পেয়েছেন। তার পূর্বপুরুষের ধরনের কর্ম করিয়া কত অপ্রিয় ঘটনার সামাল দিয়েছেন। তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

যাই হোক ফিট খাওয়া পীরজাদাকে নিয়ে আমরা দ্রুত এম্বুলেন্সে উঠে হসপিটালের দিকে রওনা হলাম। কিছুক্ষণ চলার পরে বুঝতে পারলাম, আমাদেরকে অপহরণ করা হয়েছে। এখন আমাদেরকে দূরে কোথাও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং তা' করা হল। একটানা ঘন্টাখানেক গাড়ি চলার পর একটা নিরিবিলি পরিবেশে এসে গাড়ি থেকে চোখমুখ বেধে আমাদেরকে নামিয়ে একটি অন্ধকার ঘরে আবদ্ধ করে রাখা হল। আমরা ভেবে নিয়েছি হয়তো মুক্তিপণ হিসেবে আমাদের থেকে একটি বড় অংকের অর্থ আদায় করবে। কিন্তু না; অপহরণকারীদের ফিসফিস আওয়াজে বুঝতে পারলাম তাদের সেরকম কোনো প্লান নেই। তাহলে কি? আমরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়লাম। তবে আমি একটু কম; সাইকিয়াট্রিস্ট আমার চেয়ে একটু বেশি। এমন বেশি যে রীতিমতো তার সাইকোলজি কাজ করছে না। আর প্রানপ্রিয় পীরজাদা আল্লাহ রওয়াস্তে ফিট খেয়ে গাভীন গাইয়ের মতো দলিত-মথিত হয়ে আটার বস্তার ন্যায় বদ্ধ ঘরের এক পাশে পড়ে রয়েছে। আর সাইকিয়াট্রিস্ট ভয়ে কোপোকাত হয়ে স্থিরভাবে বসে নিবিড় মনযোগসহকারে দেশি মুরগির মতো তা দিচ্ছিল। এমনবস্থায় এক রাত কাটানোর পর সকালে কয়েকজন লোক এসে আমাদের জোর গলায় কয়েকবার অভিনন্দন জানায়। অভিনন্দন পেয়ে আমরা সেবারের মতো অভিনন্দিত হতে পারিনি। কারন কি থেকে কি হচ্ছে এগুলো কিছুই ঠাওর করতে পারছিলাম না। তারা এই বলে আমাদেরকে ধন্যবাদ দিচ্ছিল যে আমারাই নাকি পীরজাদাকে তাদের হাতে তুলে দিতে সামর্থ্য হয়েছি। কথা শুনে আমরা হতভম্ব হয়ে চমকিয়ে উঠলাম। "কি বলেন এগুলো?"

- কথা কম, আগে কথা শুনো। আমরা তোমাদের কোনো ক্ষতি করব না, তোমাদের থেকে মুক্তিপণও চাই না। আমরা তোমাদেরকে সসম্মানে ছেড়ে দেব। তবে এক শর্তে। তোমাদের ফিট খাওয়া পীরজাদাকে সম্পূর্ণ সত্ব ত্যাগ করে আমাদের হাতে তুলে দিতে হবে।

তাদের কথা শুনে এখন আমাদের ফিট খাওয়ার পালা। তারপরও নিজদেরকে একটু সংবরণ করে যথেষ্ট বিনয়ের সাথে বললাম, " তা মশায়, উনি তো মোটামুটি স্পট ডেড। রকম পাবলিক দিয়ে কি করবেন।"

- সে চিন্তা তোমারা আমাদের উপরে ছেড়ে দাও। শর্তে রাজি আছ কিনা সেটা বল? সাইকিয়াট্রিস্টের নজরকারা এক হাসিতে আমি লাফিয়ে বললাম "রাজি। এবার শর্তটা বলুন?"

- তোমরা তোমাদের ফিট খাওয়া পীরজাদাকে বেহুলা-লক্ষনিদরের মতো কলা গাছের বেলায় করে গাঙের জলে ভাসিয়ে দিবে। তারপর যেদিকে দুচোখ যায়, তোমরা সেদিকে চলে যাবে। তোমাদের যেন এহেনকালে আমাদের ত্রিসীমানার মধ্যে না দেখি। এখন ভাগ।

সাইকিয়াট্রিস্ট অনেকক্ষন চুপ করে থেকে হঠাৎ বলে উঠল, " আচ্ছা উনাকে আমরা বেলায় ভাসাব কেন? উনার কি কুষ্ঠ রোগ হইছে? উনার চৌদ্দগোষ্ঠীতে এধরনের কোনো রোগ নাই। হলফ করে বলতে পারি। ইতিহাস সাক্ষি। উনি কেবল আচমকা সংবাদে খাড়ার থেকে পরে একটু ফিট খাইছে।"

- এই মূর্খ চুপ থাক। তোর ইতিহাস তোর র‍্যাকারের ভরে দিব। তোর বাঁচার ইচ্ছা আছে কিনা আগে সেটা বল? যদি ইচ্ছা না থাকে, তোকে কৃত্রিমভাবে ফিট খাওয়ানোর ব্যবস্থা করছি।

কথা শুনে সাইকিয়াট্রিস্টের সাথে সাথে আমারও লালাগ্রন্থির সমস্ত লালা নিমিষেই শুকিয়ে গেল। তারপরও অস্ফুটে বললাম, আচ্ছা, আপনাদের শর্ত অনুযায়ী আমরা কাজ করব। কারন বিপুলা পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ যদি আত্নস্বার্থে বেচে না থাকত, তাহলে পৃথিবী নিসাড় দিনপাত করত। না হয় পৃথিবী তার অস্তিত্ব হারত। তাই তো যুগ যুগ ধরে বেচে আছে সেই অমর বাণী " চাচা আপন প্রাণ বাচা।" আমরা ফাপরে পরে সেই বাণীটুকুর যথাযথ মর্যাদা দিলাম। এই বাণী না হলে হয়তো ফিট খাওয়া পীরজাদার মতো আমরা কেল্লাফতে।

যাই হোক, পীরজাদাকে ভেলায় আলতোভাবে শুইয়ে গাঙের জলে ভাসিয়ে দিলাম। নিঃসঙ্গ ভেলাটি একজন সঙ্গী পেয়ে যেন তার সমস্তটা মেলে ধরেছে, ঠিক পুরোটা আপন করে নিয়েছে। দুজন একসাথে দুলায়িত ভঙ্গীতে মন্থর গতিতে ঢেইয়ের আন্দোলনে এগিয়ে চলছে। আজকে তারা উদ্দাম, স্বাধীন। কেউ নেই তাদের পিছু নেবার। অজানা গন্তব্যের দিকে চিরচেনা ভঙ্গীতে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। দূর থেকে দূরে। অনেক দূরে। দৃষ্টির বাহিরে।





0 comments: