"ড. কামাল হোসেন
বলেছিলেন ফজর পড়ে যেন সবাই কেন্দ্র পাহারা দেয়। কিন্তু কে জানতো প্রধানমন্ত্রী
তাহাজ্জুদ পড়ে বাক্স ভরে ফেলবেন।"
ইদানিং কিছু চমকপ্রদ
ফেইসবুক ব্যবহারকারী হুজুগে ঢালাও ভাবে আন্দালিব রহমান পার্থের এই স্টেটমেন্টটি
শেয়ার দিয়ে যাচ্ছে।
একবারও চিন্তা করছে না
এখানে শরীয়তের সবচেয়ে বড় বিধান অর্থাৎ সালাতকে খুব পরোক্ষ ভাবে মৃদু বিদ্রুপ এবং
কৌশলে সম্মানহানি করা হয়েছে। তার উপর আবার স্রষ্টার নৈকট্য লাভের সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম তাহাজ্জুদের সালাত। কিন্তু আমরা নামমাত্র ভাবুক সমাজ তা নিয়ে
ভাবনাহীন থেকেই জনে জনে কর্তব্যপরায়ণ হয়ে ঐ নামমাত্র ভাবুক সমাজের নিকটই বিষয়টি
মুক্ত বাক্স্বাধীনতায় পৌঁছে দিচ্ছি।
আচ্ছা যদি ধরে নেই,
পার্থ সাহেব ঐ দৃষ্টিকোন থেকে বিষয়টি বলেননি বা বিষয়টির ততটা গভীরে প্রবেশ করে
বলেননি অথবা তার বক্তব্যকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করার সুযোগ নেই। তিনি
অগভীর-অপ্রশস্ত-অসংলগ্ন বায়ুবীয় পার্থিব রস সৃষ্টি করতে ধর্মের সাথে রাজনীতির একটা
রং চকচকা স্টেটমেন্ট দিয়েছেন। আমরা তা ঢালাও ভাবে লুফে নিয়েছি। আমরা তা হাজারবার
শেয়ার দিয়ে বিষয়টি চটচটে বানিয়েছি। আমাদের নামমাত্র ধর্মভিরুতা আমাদেরকে ভাবায়নি।
কিন্তু আমরা ধর্মভিরু সমাজ ধর্মের জাগতিক সমস্ত রসটুকু সযত্নে আস্বাদন করে নিজের
অজান্তেই আপন চেতনাকে কর্মক্ষমহীন রেখে নিরবে পাশ কাটিয়ে চলে গিয়েছি ধর্মের
স্পর্শকাতর অদৃশ্য রেখা।
যাইহোক পার্থ সাহেব
সাদামাটা ভাবে কথাটি বলেছেন বা বিষয়টি নিয়ে এতো বিশ্লেষণের অংকুর তিনি বুনেননি
অথবা তা ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করারও অবকাশ নেই। কিন্তু ফেইসবুক বুদ্ধিজীবী সমাজ
নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে যে হারে নিষ্ঠার সাথে স্টেটমেন্টটি শেয়ার দিয়ে যাচ্ছে। তখন
বিষয়টি নিয়ে ভাবার ঘন্টা বিবেকের দরজায় করাঘাত করে। একটু হলেও বিষয়টি নিয়ে ভাবা
অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
তর্কের খাতিরে ধরে নেই,
এখানে পার্থ সাহেব যে কথাটি বলেছেন তা অতি সাদামাটা। কোনো ধরনের বিতর্ক বা
সংঘর্ষের ধারধারে না। কিন্তু যখন আমরা পাইলাম আর খাইলাম ফরমুলায় গণহারে বিষয়টি
শেয়ায় দিয়ে সর্বলোকে জানিয়ে বেড়াই। তখন স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে এখানে এমন কি আছে যা
নিয়ে ফেইসবুক বুদ্ধিজীবী সমাজ এতো রব তোলেছে।
উত্তর দাঁড়ায় রংচটা
স্টেটমেন্টের চটচটে ভাব দেখেই সবার শেয়ার দেয়া। স্টেটমেন্টের আভ্যন্তরীণ
গাম্ভীর্য্যের প্রতি কারো বিন্দু মাত্র খেয়াল নেই।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে,
আমার একটা স্টেটমেন্ট শেয়ারে কি এমন আসে যায়?
আপনার এমন ভাবনাহীন
স্টেটমেন্ট শেয়ারে অনেক কিছু আসে যায়। আপনার ভাবনাহীন-অগভীর-অচেতন স্টেটমেন্ট
শেয়ার অন্যের মাঝে অগভীর-অচেতন ভাবনারই বীজ বপন করে। কোন কিছু নিয়ে তার গভীর ভাবে
ভাবার পথ আপনার অগভীর ভাবনা দ্বারা প্রভাবিত হয়। তার বিশ্লেষণবোধগত বিকাশ আপনার
দ্বারা বাধাগ্রস্থ হয়। বিবেকের বিচারবোধের তীক্ষ্ণতা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে পড়ে।
বলাবাহুল্য, রোজ হাশরে
দিন নাকি সৃষ্টিকর্তা তার সৃষ্টির মধ্যে শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি আশরাফুল মাখলুকাত তথা
মানুষের আকল (বিবেক) এর বিচার করবেন।
সৃষ্টিকর্তা মানুষকে
আকল দিয়েছেন এই কারনে মানুষ যেন ভাল-মন্দ, সুন্দর-কুৎসিত, সম্মান-অসম্মান ইত্যাদি
অনুধাবন করতে পারে, বিচার-বিবেচনাবোধকে কাজে লাগিয়ে যেন আপাত তাৎপর্যহীন কাজগুলোও
মানুষ পারস্পরিক স্বার্থে সম্পাদন করতে পারে।
কিন্তু বেশিরভাগই
ফেইসবুক ব্যবহারকারী আকলকে গভীর ভাবনায় আকুল করে তুলতে পারে না। তাইতো তাদের নাটাই
ছাড়া ঘুড়ি উড়ানো।
কোনটা শেয়ার দেয়া উচিত
আর কোনটা শেয়ার দেয়া উচিত না? কোনটা ধর্মকে প্রশংসিত করে আর কোনটা ধর্মকে খাটো করে। কোনটা
সমাজে অশ্লীলতা ছাড়ায় আর কোনটা সমাজে শালীনতা ছড়ায়। তা’ই যদি নামমাত্র সচেতন ফেইসবুক ব্যবহারকারী আকল দিয়া উপলব্ধি করিয়া উঠে
শেয়ার দিতে না পারে। তখনই লোকমুখে “বেক্কল”
শব্দের গোড়াপত্তন ঘটে।
0 comments: